অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের (Amritsar Golden Temple) ঘটনার পরদিনই ফের পঞ্জাবের (Punjab) এক গুরুদ্বারে গণপিটুনিতে (Mob Lynching) হত্যা। এর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন শিখ (Shikhs) নেতারা।
ফের পঞ্জাবে (Punjab) ঘটল গণপিটুনিতে (Mob Lynching) মৃত্যুর ঘটনা। শনিবারই অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে (Amritsar Golden Temple) ধর্ম অবমাননা করার চেষ্টায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এর একদিন পর, রবিবার কাপুরথালার (Kapurthala) নিজামপুর গ্রামের এক গুরুদ্বারে একই অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হল এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে। সেই সময় সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল বলে অভিযোগ। অর্থাৎ, পরপর দুদিন পঞ্জাবের দুটি ধর্মীয় স্থলে গণপিটুনিতে (Mob Lynching) হত্যার ঘটনা ঘটল।
নিহত যুবক পঞ্জাবের বাইরের বাসিন্দা বলে অনুমান করা হচ্ছে। বস্তুত এদিন ভোরেই ওই যুবককে ধরে, গুরুদ্বারের ভিতরে একটি কক্ষে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তাকে হেফাজতে নিতে এসেছিল পুলিশ। এই নিয়ে শিখ গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে পুলিশের একপ্রস্থ সংঘর্ষও হয়। এরপর, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যেই গায়ের জোরে ওই কক্ষের ভিতরে ঢুকে পড়ে উত্তেজিত জনতা। ওই যুবককে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে তারা। জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের বয়স ছিল ২০-র ঘরে। তার চুল ছিল ছোট করে ছাঁটা ছিল এবং পরনে ছিল লাল রঙের শার্ট। এখনও পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন - Cold Wave in North India: দ্রাসে মাইনাস ১৯ ডিগ্রি, শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তর ভারত, দেখুন
আরও পড়ুন - Punjab election 2022 : বিজেপির হাত ধরে ভোট বৈতরণী পার করতে মরিয়া ক্যাপ্টেন
গুরুদ্বারের ম্যানেজার অমরজিৎ সিং-এর অভিযোগ, ওই যুবক ধর্মবিদ্বেষী। গুরুদ্বারের ভিতর 'নিশান সাহেব'কে (শিখ পতাকা) সে অসম্মান করেছিল। ভোররাতে সে যখন পালাতে গিয়েছিল, সেই সময়ই গুরুদ্বারের কর্মীরা তাকে ধরে ফেলে। অমরজিৎ সিং আরও জানিয়েছেন, ওই যুবক তাদের জানিয়েছিলেন, নয়াদিল্লির (New Delhi) একজন তাকে শিখ ধর্মকে অবমাননা করার জন্য দিয়েছিল। সেই অর্থের বিনিময়েই সে এই কাজ করতে এসেছিল বলে স্বীকার করেছিল সে। এরপর সকাল থেকেই গুরুদ্বারের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিভিন্ন শিখ গোষ্ঠী। তারা ওই যুবককে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানায়। তাদের অভিযোগ ছিল, এর আগে বিভিন্ন ধর্ম অবমাননার মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকার ন্যায়বিচার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারাই যুবককে শাস্তি দেবে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন, কাপুরথালার পুলিশ সুপার হরকমলপ্রীত সিং খাখ-সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তারা। শিখ সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা করেন। কেউ যাতে জোর করে প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য যুবকটিকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, তার বাইরে ভারি পুলিশ প্রহরাও মোতায়েন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে। পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য গুরুদ্বারে 'গুরু গ্রন্থ সাহেব' বা 'গুটকা সাহেবে'র মতো কোনও ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তকের অবমাননা করা হয়নি বলেই জানিয়েছেন।
শনিবার প্রায় একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরেরও। সেখানে গর্ভগৃহের ভিতরে রাখা গুরু গ্রন্থ সাহেবকে অপবিত্র করার চেষ্টা করার অভিযোগে আরেক ব্যক্তিকে, শিখ ধর্মাবলম্বীরা পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটেছিল, সন্ধ্যায় যখন রীতি মেনে রেহরস সাহেব পাঠ চলছিল, সেই সময়। জ্ঞানী বলজিৎ সিং যখন স্তোত্র পাঠ করছিলেন, সেইসময়ই ওই ব্যক্তি রেলিং টপকে পবিত্র গ্রন্থের দিকে ছুটে গিয়ে একটি 'কৃপান' তুলে নিয়েছিলেন। তবে তিনি কিছু করে বসার আগেই তাঁকে কব্জা করে ফেলেথিলেন মন্দিরের রক্ষীরা।
আগামী বছরের শুরুতেই পঞ্জাবের নির্বাচন। ঠিক তার আগে পরপর দুদিনে দুটি এই ধরণের ঘটনা ঘটায়, এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক দলেরই হাত রয়েছে বলে মনে করছেন শিখ নেতারা। ভারপ্রাপ্ত 'অকাল তখত' জ্ঞানি হরপ্রীত সিং বলেছেন, 'সরকারকে অবশ্যই এই ষড়যন্ত্রের পিছনের কোন শক্তি রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। শিখরা এই ধরনের কাজ আর সহ্য করবে না।' সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে উত্তাল পঞ্জাব।