
মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-র বিক্ষোভকারীরা দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। তারা বাংলাদেশে হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসের গণপিটুনিতে হত্যার প্রতিবাদ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ভারী নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি দাবি করে, কেউ কেউ ন্যায়বিচার এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি জানায়। বিক্ষোভকারীরা দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের দিকে মিছিল করার চেষ্টা করে। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেও পুলিশ ও আধাসামরিক কর্মীদের বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আটকে যায়। তারা বাংলাদেশে এক হিন্দু যুবককে হত্যার প্রতিবাদ করছিল।
সর্বভারতীয় হিন্দি বাঙালি সংগঠন, ভিএইচপি এবং বজরং দলের সদস্যরা দুর্গাবাই দেশমুখ সাউথ ক্যাম্পাস মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। তারা বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে স্লোগান তোলে। বিক্ষোভকারীদের বিশাল ভিড় নিরাপত্তার ব্যারিকেড ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা "ভারত মাতা কি জয়", "ইউনুস সরকারের হুঁশ ফিরুক ", এবং "হিন্দু হত্যা বন্ধ করো" স্লোগান দিচ্ছিল। একজন বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলেন যে হিন্দুরা বিপদে আছে এবং এই দেশ ভগবান রামের। তিনি বলেন, "হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে। এই দেশ ভগবান রামের। এই দেশ ভগবান কৃষ্ণের। আমরা এখানে কাউকে হত্যা করি না, কিন্তু আমাদের বোন ও মেয়েদের সম্মান বিপন্ন।"
এই বিক্ষোভের উদ্দেশ্য ছিল ১৮ ডিসেম্বর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসের মর্মান্তিক গণপিটুনি ও হত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, বিক্ষোভের পর নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ নয়াদিল্লি এবং আগরতলায় কনস্যুলার এবং ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে। বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক সেদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ভারতে তার কূটনৈতিক মিশনে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক এই হিংসার নিন্দা জানিয়ে কূটনৈতিক কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের ওপর হুমকির কথা উল্লেখ করেছে এবং ভারতকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এই ঘটনাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।"
এই ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে ২২ ডিসেম্বর ২০২৫-এ শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে ভাঙচুর এবং ২০ ডিসেম্বর ২০২৫-এ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ।
২৭ বছর বয়সী হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে ময়মনসিংহে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তৈরি করেছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১৮ ডিসেম্বর একদল লোক দিপুকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং পরে তার দেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে।