
দিল্লির লালকেল্লা এলাকায় ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রের জট খুলছে ধীরে ধীরে। এই ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। তদন্তকারী সংস্থাগুলি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে প্রায় আটজন সন্দেহভাজন চারটি জায়গায় একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং প্রতিটি জুটিকে একটি নির্দিষ্ট শহরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে অভিযুক্ত দলগুলো জোড়ায় জোড়ায় এগোনোর পরিকল্পনা করেছিল, এবং প্রত্যেকের কাছে একযোগে হামলার জন্য একাধিক ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ছিল। যাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, তাদের মধ্যে লালকেল্লা বিস্ফোরণের অভিযুক্ত ডঃ মুজাম্মিল, ডঃ আদিল, ডঃ উমর এবং শাহিনের মতো অতীতের সন্ত্রাস মামলায় জড়িত ব্যক্তিরাও রয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, পুলিশ ভারতের একাধিক শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর একটি বড় সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে যে অভিযুক্তরা যৌথভাবে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা নগদ তুলেছিল, যা উমরকে অভিযানের খরচের জন্য দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, এই টাকা দিয়ে গুরুগ্রাম, নুুহ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ২০ কুইন্টালের বেশি এনপিকে সার (এনপিকে সার হল নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), এবং পটাশিয়াম (K)-এর মিশ্রণ এবং এটি বিস্ফোরক পদার্থ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে) কেনা হয়েছিল, যা আইইডি তৈরির উদ্দেশ্যে ছিল।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে উমর নিরাপদে কার্যকলাপ সমন্বয়ের জন্য দুই থেকে চার সদস্যের একটি সিগন্যাল অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল।
তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, নিহত জঙ্গিদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পর ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ডঃ মুজাম্মিল আইসিসের একটি শাখা আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ-এর প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তাকে এই নেটওয়ার্কে পরিচয় করিয়ে দেয় ইরফান, ওরফে মৌলভি নামের এক ব্যক্তি।
২০২৩ এবং ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলি এই মডিউলটি একটি স্বাধীন জঙ্গি গোষ্ঠী গঠনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সংগ্রহ করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের সন্ধানে রয়েছে এবং সন্দেহ করছে যে অভিযুক্তরা অদূর ভবিষ্যতে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।
এদিকে, দিল্লি পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণকারী ব্যক্তি ছিলেন ডঃ উমর উন নবী। ফরেনসিক ডিএনএ পরীক্ষায় তার মায়ের সঙ্গে তার জৈবিক নমুনা মিলে যাওয়ার পর এটি নিশ্চিত করা হয়। এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা জানান যে কয়েক দিনের বিস্তারিত ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন যে বিস্ফোরণের পর, উমরের পা গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল এবং অ্যাক্সিলারেটরের মধ্যে আটকে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে গাড়ি বিস্ফোরণের সময় তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। "ডিএনএ প্রোফাইলিং-এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে ডঃ উমর উন নবী হিসেবে চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তার নমুনা তার মায়ের ডিএনএ-র সঙ্গে মেলানো হয়েছে," একজন সিনিয়র দিল্লি পুলিশ অফিসার বলেন।
সূত্র জানিয়েছে, দিল্লির জঙ্গি বিস্ফোরণ মামলার চলমান তদন্তে উমরের শনাক্তকরণ একটি বড় সাফল্য। এই বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত হন এবং জাতীয় রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণটি লালকেল্লার কাছে, একটি উচ্চ-নিরাপত্তা এবং ঐতিহ্যবাহী এলাকায় ঘটে, যা গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। তদন্তকারীরা এখন বিস্ফোরকের উৎস, সম্ভাব্য হ্যান্ডলার এবং ঘটনাটি একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল কিনা তা খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
এই ফরেনসিক নিশ্চিতকরণ পুলিশকে কল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ এবং গাড়ি থেকে উদ্ধার করা সামগ্রীসহ অন্যান্য প্রমাণ জুড়তে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ স্পেশাল সেল এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি যৌথভাবে এই ঘটনার পেছনের জঙ্গি যোগটির তদন্ত করছে। মৃত সন্দেহভাজনের সম্ভাব্য সহযোগীদের খুঁজে বের করতে দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে একাধিক দল মোতায়েন করা হয়েছে।