গত ২৪ এপ্রিল হঠাৎ করেই লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হয় দেশে। ফলে বিপাকে পরে যান দেশের নানা প্রান্তে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের দল। লকডাউনের ফলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবিকা যেমন বন্ধ হয়ে যায় তেমনি বাড়ি ফেরার পথও ছিল বন্ধ। শ্রমিক দিবস থেকে তাঁদের বাড়ি ফেরাতে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু করে ভারত সরকার। যদিও এই ট্রেনের ভাড়া প্রথমে শ্রমিকদেরই দিতে হবে বলে জানিয়েছিল সরকার। সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো কীভাবে এই ভাড়া দেবেন, তা নিয়ে তখন তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল দেশজুড়ে।
সরকার দাবি করছে এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষেরও বেশি শ্রমিককে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে করে নিজের রাজ্যে ফেরান হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা অন্য কথা বলছে। অনেকেই পাচ্ছেন না এই ট্রেনের সুযোগ নিতে। তাই তাঁদের ভরসা নিজের দুই পা। সেই দুই পাকে অবলম্বন করেই বাড়ি পৌঁছতে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন তাঁরা। কে নেই সেই দলে, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই হাঁটছেন। এমনই এক পরিবারের অম্বালা থেকে পায়ে হেঁটে চলছে উত্তরপ্রদেশের নিজের গ্রামে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সরকার কী করছে, তা নিয়ে বারবারর প্রশ্ন তুলছিলেন বিরোধরা। বৃহস্পতিবার দেশের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের আগামী দু’মাস বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবারহ করা হবে। রেশন কার্ড নেই এমন পরিযায়ী শ্রমিকরাদের জন্য মাসে মাথা পিছু ৫ কেজি গম বা চাল এবং পরিবার পিছু এক কেজি ডাল দেওয়া হবে। তাঁরাও ২ মাস এই পরিষেবা পাবেন। এতে ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক লাভবান হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এর জন্য খরচ হবে ৩৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু চেন্নাইতে আটকে পড়া উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলছে।
ছোট শিশু থেকে অসুস্থ বৃদ্ধ, লকডাউন পথে নামিয়েছে সকলকেই। মাইলের পর মাইল হাঁটছেন অন্তস্বত্ত্বা, কখনও বা দেখা যাচ্ছে সদ্যজাতকে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন সদ্য মা হওয়া তরুণী। এমনই এক পরিবারের দেখা মিলল নাসিক থেকে সাতনার পথে।
সম্প্রতি ঔরঙ্গাবাদে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। প্রতিদিনই খবর পাওয়া যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে পথদুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তাঁরা। তবু শহরে কর্মহীন হয়ে পড়ে পরিযায়ীরা যেকোন মূল্যে বাড়ি ফিরতে চান। আর তাই নিজের গর্ভবতী স্ত্রী ও সন্তানকে পিঁড়িতে বসিয়ে ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন এক যুবক।
কডাউনের জেরে শোচনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৪৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের। কাজ না থাকায় ভিন রাজ্যে আটকে পড়ে সঞ্চয় ফুরিয়েছে। যে কোন মূল্যে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে তাঁদের।
শহরে কাজ হারানো মানুষগুলো গ্রামে ফিরতে ট্রাকের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে রওনা হচ্ছেন।
হায়দরাবাদ থেকে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে ফিরবে এক পরিযায়ী পরিবার। ট্রাকের মধ্যে টেনে হিঁচড়ে তোলা হচ্ছে শিশুদের।
মুম্বইয়ের ধারাবি বস্তিতে সামাজিক দূরত্বের বিধি না মেনেই বাড়ি ফেরার লম্বা লাইনে শ্রমিকের দল।
চলতে হবে দীর্ঘ পথ। ট্রলি ব্যাগেই ঘুমিয়ে পড়েছে ভবিষ্যত ভারত।
গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের এই জীবনযুদ্ধ নিয়ে একটি কথাও বলতে শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। হয়তো মোদী কিছু বলবেন না তা আগেই বুঝে গিয়েছিলেন দেশ নির্মানের কারিগররা। তাই প্রধানমন্ত্রী কিছু বলার আগেই নিজেরা হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভর।