২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২২-এ ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোট বলতে গেলে অ্যাসিড পরীক্ষা। বিশেষ করে বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল-এর মধ্যে এই নির্বাচনগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোষণা হতে চলেছে ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ (5 State Assembly Elections 2022)। নির্বাচন কমিশন (Election Commission) সূত্রে যা খবর তাতে বিকেল সাড়ে তিনটেয় সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে (5 State Assembly Elections Date Announcement)। যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হবে তারমধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (UP Elections 2022), পঞ্জাব (Punjab Elections 2022), গোয়া (Goa Assembly Elections 2022), মণিপুর (Manipur Assembly Elections 2022) এবং উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand Assembly Elections 2022)।
৫ রাজ্যে ভোটগ্রহণ কবে হবে এই নিয়ে গত বছরের শেষ থেকেই একটা গুঞ্জন ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিভিন্ন সভা-সমিতিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০২২-এর শুরুতেই ভোট হবে। অতিমারির জন্য ৫ রাজ্যে ভোটগ্রহণ পিছনোর কোনও দরকার যে হবে না তাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র গলাতেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথার-ই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল যে ৫ রাজ্যে-র করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই ভোট গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০২২-এর বছর শুরু হতেই গত কয়েক দিন ধরে ৫ রাজ্যে ভোট নিয়ে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড এবং মণিপুর-এর করোনা এই মুহূর্তের পরিস্থিতির রিপোর্ট কমিশনের কাছে চলে আসতেই জল্পনা শুরু হয়ে যায় ভোটের দিণক্ষণ নিয়ে। অবশেষে শনিবার সকালেই নির্বাচন কমিশন সূত্রে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েই দেওয়া হয় যে এদিনই ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চলেছে কমিশন।
কোভিড অতিমারিতে নির্বাচন কমিশন প্রথম ভোট করিয়েছিল বিহারে। এরপর এই তালিকায় জুড়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু, কেরলের নামও। কিন্তু প্রতিটি রাজ্যেই দেখা গিয়েছে যে ভোটপরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল। এই রাজ্যে বিধানসভা ভোট মিটতেই যেন করোনার সুনামি নেমেছিল। নতুন করে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা চমকে দিয়েছিল বিশ্বকে। ফলে, ওমিক্রন-এর সুনামি যখন আছড়ে পড়েছে দেশে। প্রতিনিয়ত দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে সংক্রমণের সংখ্যা সেখানে ৫ রাজ্যে ভোট ঘোষণা আদৌ যুক্তিযুক্ত কি না তা নিয়ে তর্জা চলছে।
সবচেয়ে যেটা চিন্তার বিষয় তাতে ওমিক্রন-এর সংক্রমিত করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ঘোষণা মানেই সভা-সমিতি, ব়্যালি, দুয়ারে-দুয়ারে প্রচার-সবই করবে রাজনৈতিক দলগুলি। তাহলে এক্ষেত্রে কী ধরনের কোভিড বিধি লাগু করার নির্দেশিকা জারি করে কমিশন- সেদিকেও নজর সকলের। যদিও, অতিমারির মধ্যে প্রতিটি ভোটেই কোভিড বিধি-র কথা শুনিয়েছে কমিশন- কার্যক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক দলই তা মান্য করেনি। বরং বিপন্ন করেছে সাধারণ মানুষকে। এই নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হলেও নির্বাচন কমিশনের কোনও সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলেও অনেকে অভিযোগ করেছিলেন।
গত সপ্তাহেই ৫ রাজ্যে ভোট নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিল নির্বাচন কমিশন। এই বৈঠকে উত্তরপ্রদেশে ভোটগ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়। কারণ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সোশ্যাল ডিস্টান্সিং পালন করতে গেলে ভোটগ্রহণের সময়সীমা বাড়াতে হবে বলেই মনে করছে কমিশন। এমনকী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে এতে সমস্যার সমাধান করা যায় কি না তা নিয়ে চর্চা হয়েছে এই বৈঠকে। উত্তরপ্রদেশে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিধানসভা আসন রয়েছে। ফলে এখানে ভোট করানো মানে এক রাজসূয় যজ্ঞ বলা যেতে পারে। ডিসেম্বর মাসেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি নির্দেশিকা জারি করে। এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে আদালত জানিয়েছিল যাতে ভোট কয়েক মাসের জন্য পিছানো হয়। বিশেষ করে ওমিক্রনের প্রকোপ যেভাবে বাড়তে তাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি বলেও জানিয়েছিল আদালত।