প্রচণ্ড গরমেও যে করোনাভাইরাস-এর মৃত্যু হয় না
কিন্তু হ্যান্ডস্যানিটাইজার কি হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতি
দিল্লিতে এক গাড়ি চালকের মৃত্যুর পর তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি
সত্যি টা আসলে কী
প্রচণ্ড গরমেও যে করোনাভাইরাস-এর মৃত্যু হয় না, তা এতদিনে ভারতবাসী বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু, সেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হাতিয়ার যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্রচন্ড গরমে কি তার থেকে ঘটতে পারে চরম বিপদ? সম্প্রতি দিল্লির এক মর্মান্তিক ঘটনার পর এই নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
দিল্লিতে সম্প্রতি একটি গাড়িতে আচমকা ভয়াবহ আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে এক চালকের। ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে গাড়ির ভিতরে আসনে বসেই পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছেন চালক। আর এই ভিডিওর সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, রোদের মধ্যে গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখে দিলে, তা থেকে আচমকা এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। পুলিশ এখনও ওই দুর্ঘটনার কারণ জানাতে পারেনি। তবে নেটিজেনদের দাবি স্যানিটাইজার থেকেই অগ্নিসংযোগ ঘটেছিল ওই গাড়িটিতে। শুধু ওই একটা নয়, আরও বেশ কয়েকটি পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া গাড়ির ছবি দিয়ে এই দাবি করা হচ্ছে।
এই নিয়ে জনমানসে তৈরি হয়েছে চরম বিভ্রান্তি। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্কের সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে ঘোরাটাও যাঁরা ইতিমধ্যে অভ্যাস করে নিয়েছেন, তাঁরা প্রশ্ন করছেন, তবে কি স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে ঘোরাঘুরি করাটা নিরাপদ নয়? বিশেষ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের যেখানে মূলত অ্যালকোহল দিয়েই তৈরি, যা অত্যন্ত জ্বলনযোগ্য।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এবং হ্যান্ড সানিটাইজারের উপাদানগুলির সুরক্ষা সম্পর্কিত তথ্যানুসন্ধান করে জানতে পেরেছে, যাঁরা দাবি করছেন অতিরিক্ত গরমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে আগুন ধরে যেতে পারে, তাঁরা পুরোটাই যে ভুল বলছেন তা নয়। তবে তাই বলে স্যানিটাইজার নিয়ে বের হতে ভয়ের কিছু নেই। মানতে হবে কিছু নিয়ম।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলার তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে, স্যানিটাইজারের বোতলে নিজে থেকে, অর্থাৎ বাইরে থেকে আগুন না ধরালে অগ্নিসংযোদ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর পিছনে রয়েছে 'অটো-ইগনিশন তাপমাত্রা'র বিজ্ঞান। 'অটো-ইগনিশন তাপমাত্রা' হল বাইরের কোনও প্রভাব ছাড়া নিজে নিজে কোনও পদার্থে আগুন ধরার সর্বনিম্ন তাপ। স্যানিটাইজারে যে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়, তার ক্ষেত্রে এই স্বয়ংক্রিয়-জ্বলন তাপমাত্রা হল ৩৬৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়। এই উত্তাপে টিন, সীসা এবং ক্যাডমিয়ামের মতো ধাতুগুলিও গলে যায়, রোগে যতক্ষণই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল রাখা হোক না কেন, কোনওদিন এই পরিমাণ তাপ তৈরি হয় না।
তাই বলে বিপদের সম্ভাবনা একেবারেই নেই তা নয়। ভারত সরকারের আগুন বিষয়ক পরামর্শদাতা ডি কে শাম্মি জানিয়েছেন, ধরা যাক কোনও ব্যক্তি রোদের মধ্যে কয়েক ঘন্টার জন্য ভুল করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল, মুখ খোলা অবস্থায় রেখে দিয়ে গেলেন। ফিরে এসে গাড়ি চালানোর আগে তিনি সিগারেট জ্বালালেন। তার থেকেই কিন্তু গাড়ি শুদ্ধ তিনি পুড়ে যেতে পারেন। কারণ এই ক্ষেত্রে কাজ করে 'ফ্ল্যাশ পয়েন্ট' বলে আরেকটি বিজ্ঞান ।
ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হল, যে ন্যূনতম তাপমাত্রায় কোনও তরল তার পৃষ্ঠের উপরিভাহে পর্যাপ্ত ঘনত্বের বাষ্প তৈরি করে জ্বলে উঠতে পারে। অ্যালকোহলের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট কিন্তু মাত্র ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভারতের অনেক জায়গাতেই এখন তাপমাত্রা এর প্রায় দ্বিগুণ। তাই যদি স্যানিটাইজারের বোতলের মুখ খোলা থাকে, তবে তাপের কারণে স্যানাইটাইজারের অ্যালকোগল দ্রুতই বাষ্পীভূত হবে। আর বন্ধ গাড়ির মতো আবদ্ধ জায়গায় তা জমতে থাকলে একটা গ্যাস চেম্বারের মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। এই বাষ্পে সেইসময় আগুনের শিখাও লাগবে না, একটা হালকা ফুলকি পড়লেই সেই বাষ্প দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে।
তাই, স্যানিটাইজারের বোতলের মুখ সবসময় বন্ধ করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সেইসঙ্গে স্যানিটাইজারগুলি সুরক্ষা নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা তাকে বোতলটি কোনও শীতল, ভালভাবে বায়ুচলাচল করে এমন জায়গায় রাখতে হবে। বোতলের মুখ খোলা থাকলে যে শুধু আগুন লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা নয়। বোতলের সব স্যানিটাইজারও কিন্তু উবে যাবে। তাই অতি গরমে স্য়ানিটাইজারের বোতলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, সেই দাবি ভুল হলেও, স্যানিটাইটাজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে, সেই দাবিটি কিন্তু সঠিক।