ভারতের প্রথম মহিলা স্পাই! নেতাজির প্রাণ বাঁচাতে তিনি হত্যা করেছিলেন নিজের 'ব্রিটিশপ্রেমী' স্বামীকেই

Published : Aug 01, 2025, 10:18 AM ISTUpdated : Aug 01, 2025, 10:19 AM IST
Netaji

সংক্ষিপ্ত

সত্যিই যেন বজ্রকঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। হত্যা করেছিলেন নিজের স্বামীকেই।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আর সেইসঙ্গেই সামনে আসে একাধিক বিপ্লবীর নাম। যেখানে পুরুষ বিপ্লবীরদের পাশাপাশি কয়েকজন একরোখা, জেদি এবং অদম্য নারীদের নামও জানা যায়, যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে লড়াই করেছিলেন এবং একাধিক গোপন মিশনে বারবার বিপাকে ফেলেছিলেন ব্রিটিশদের। 

সেই তালিকায় এমন একজনের নাম রয়েছে, যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সাহসী নারীর নাম হল নীরা আর্য। উত্তরপ্রদেশের একটি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শ্রীকান্ত জয়সওয়াল নামে এক ব্যক্তির।

ইতিহাস ঘাঁটলে কী জানা যায়?

সেই শ্রীকান্ত জয়সওয়াল আসলে ছিলেন ব্রিটিশদের অনুগত এক পুলিশ অফিসার। চাকরি বাঁচানোর জন্য দেশের বিরুদ্ধেও চলে যেতেন তিনি। আর ঠিক উল্টোদিকে নীরা ছিলেন পুরোপুরিভাবে দেশের জন্য দায়বদ্ধ। তাঁর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম, নীরাকে স্বামীর বিরুদ্ধে নিয়ে গেছিল। সেই ১৯৪০ সালের কথা এটা। নীরার কাছে গোপনে খবর আসে, তাঁর স্বামী ব্রিটিশ সরকারের আদেশ মেনে নেতাজিকে হত্যা করতে চলেছেন। 

কিন্তু দেশপ্রেম যে সবার আগে। তাই নিজের স্বামীকে হত্যা করতেও একবারের জন্য দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। তাঁর এই কঠিন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দিয়েছিল যে, নীরার সাহস এবং দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর আত্মত্যাগকে। এরপর আর্য ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ’ঝাঁসি কী রানি' রেজিমেন্টে যোগ দেন। তবে নীরা বেছে নেন অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি কাজকে। আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্তচর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তাই তাঁকে বলা হয়, ভারতের প্রথম মহিলা গুপ্তচর। 

তাঁর কাজটা কী ছিল?

বিভিন্ন ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চলে তিনি যেতেন এবং সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আইএনএ-কে পাঠাতেন। নীরার প্রধান দায়িত্ব ছিল নেতাজির গতিবিধিকে গোপন রাখা এবং শত্রুপক্ষের কার্যকলাপ আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু হঠাৎই একটি অভিযান চলাকালীন ব্রিটিশরা তাঁকে ধরে ফেলে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে নিজের স্বামী হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বন্দি অবস্থায় তাঁর উপর চালানো হয় অমানবিক অত্যাচার। শোনা যায়, তাঁর বুকে গরম লোহার রড ধরা হয়, তবুও তিনি মুখ খোলেননি। 

নেতাজি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি নেতাজিকে চিনি না। কিন্তু আমার কর্তব্য হল দেশের সুরক্ষা এবং যা জীবনের থেকেও বড়।" আমাদের দেশ ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়। তবে ভারত স্বাধীন হলেও সেই সাহসী নীরা আর্যর কথা হয়ত আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। কোনও সরকারি স্বীকৃতি কিংবা সম্মান তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। শোনা যায়, শেষ জীবনে দিল্লীর রাস্তায় ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করতেন তিনি। 

ভাবুন একবার! যে দেশের জন্য লড়লেন, সেই দেশই তাঁকে সম্মান দিতে পারল না। অথচ তিনি কোনওদিন অভিযোগ করেননি। তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে নীরা আর্য শুধু একটি নাম নয়, একটা গোটা ইতিহাস। যা আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, এবং সাহসিকতার নিদর্শন হয়ে থেকে গেছে।

 

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Today live News: ছুটির দিনে মহানগরের পারদ পতন, শীতে জবুথবু কলকাতায় আর কতটা নামল তাপমাত্রা?
দেশজুড়ে ইন্ডিগো-র উড়ান পরিষেবায় বিপর্যয়, সিইও-কে শোকজ নোটিস কেন্দ্রের