সম্প্রতি দ্বিতীয় বারের জন্য গোয়া সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর এই সফরেই তৃণমূলে যোগ দেন এনসিপি বিধায়ক চার্চিল আলেমাও। গোয়ায় এনসিপির একমাত্র বিধায়ক ছিলেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এশিয়ানেট নিউজের প্রতিনিধি।
২০২২ সালে গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন (Goa Election 2022) রয়েছে। আর এখন সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তৃণমূল (TMC)। সেখানে নিজেদের জমি শক্ত করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। সম্প্রতি দ্বিতীয় বারের জন্য গোয়া সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর তাঁর এই সফরেই তৃণমূলে যোগ দেন এনসিপি বিধায়ক (NCP MLA) চার্চিল আলেমাও (Churchill Alemao)। গোয়ায় এনসিপির একমাত্র বিধায়ক ছিলেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এশিয়ানেট নিউজের প্রতিনিধি। নির্বাচনের আগে কেন তিনি এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিলেন তা একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন চার্চিল।
আপনি এনসিপির একমাত্র বিধায়ক ছিলেন আর এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নিতে কেন বাধ্য হলেন?
আমি গত এক বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে (এনসিপি) জোটের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারা আমাদের অপেক্ষা করতে বাধ্য করেছিল। আর তারপর প্রতারণা করেছে। আমাদের অনেক নেতা পদত্যাগ করেছেন। আমি জনগণের নেতা, দলের নেতা নই। শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) সহ আমাদের নেতারা এনসিপির জন্য ১০টি আসনের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, কিছুই হয়নি। কংগ্রেস এনিয়ে আগ্রহী ছিল না। এরপর আমি সাংবাদিক বৈঠক করতাম, বলা হত যে আমাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। কেউই গুরুত্ব দিত না।
আজ ভারতে শুধুমাত্র 'দিদি' (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য উপযুক্ত এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারেন। সে খুব সোজা সাপ্টা। মানুষ দেখেছেন যে তিনি তাঁর নিজের রাজ্যের জন্য কী করেছে। মানুষের উপকারের জন্য তিনি অনেক প্রকল্প নিয়ে এসেছেন এবং এখানেও তা করবেন। তিনি ভালো এবং তার দল আমাদের (গোয়ার মানুষ) জন্য ঠিক আছে।
আপনি যখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তা নিয়ে আপনার বিধানসভা এলাকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?
আমি ১৩ ডিসেম্বর আমার সমর্থকদের সঙ্গে একটি সভা করেছি। এর আগে এখনও পর্যন্ত কেউ গোয়ায় এত বড় সভা করেননি। সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। সেই কারণেই তাঁরা এই সভাতে এসেছিলেন। আট হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কী আপনার কোনও আলোচনা হয়েছিল ?
(কিছুটা থেমে গিয়ে) পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা স্থানীয় নেতাদের অনেকবার বলেছি। এটা আমার জন্য ভালো, কারণ আমি মানুষের জন্য কাজ করি, আমার বাড়ির জন্য নয়। আমি সেরকম মানুষ নই। আমি জনগণের মানুষ।
এনসিপি নেতারা আপনাকে 'সুবিধাবাদী' বলেন, কারণ নির্বাচনের আগে প্রায়ই আপনি দল পরিবর্তন করেন। এনিয়ে আপনি কী বলবেন?
নেতাদের প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু, আমি কেন এমনটা করেছি তা তাঁদেরও ভাবতে হবে। আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম এবং কংগ্রেস ও এনসিপির জোটের জন্য এক বছর ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। আমি গোয়া ইউনিটের সভাপতিকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম এবং একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছি। কিন্তু, তাঁরা কেউ গুরুত্ব দেননি। আর সেই কারণেই আমি পদত্যাগ করেছি। আমি শরদ পাওয়ার এবং প্রফুল প্যাটেলের বিরুদ্ধে নই। আমি গোয়ার জন্য কিছু করতে চাই এবং তাঁদের সুশাসন দিতে চাই। আমি মনে করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করবেন।
গোয়ার জন্য এনসিপির থেকে তৃণমূলকে বেছে নেওয়া কী ভালো?
দেখুন, সমস্যা হল, এনসিপি মহারাষ্ট্রে অনেক ভালো করেছে। কিন্তু গোয়ায় আমি একাই ছিলাম। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় ভালো কাজ করেছি। আর গোয়ার মানুষ আমাকে ভালো করে জানেন এবং আমাকে বিশ্বাস করেন।
২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে?
হ্যাঁ, আর আমার জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে।
আপনি কী মনে হয় না যে তৃণমূল এবং তাদের জোটের শরিক মহারাষ্ট্রবাদী গোমান্তক পার্টি ভোট ভাগ করে বিজেপিকে সুযোগ দিতে পারে?
ভারতে দু-তিনজন ভালো নেতা আছেন। কংগ্রেস দলে একসময় শরদ পাওয়ারের মতো নেতা ছিলেন। দলের নেতৃত্বদের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর তিনি বেরিয়ে আসেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসে একজন ভালো নেত্রী ছিলেন। কংগ্রেস তাঁর দক্ষতাকে গ্রহণ করেনি, তাই তিনি বেরিয়ে গিয়ে একটি দল তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শক্তিশালী। আম আদমি পার্টি এবং অন্যরাও গোয়ায় লড়াই করছে। এখানে অন্য দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই। আমি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার পরামর্শ দিয়েছিলাম, কিন্তু কংগ্রেস শুনছে না। এতে আমি কী করতে পারি?