মুদ্রাস্ফীতি গত ছ-বছরের মধ্য়ে যে সর্বাধিক, তা জানতে কোনও পরিসংখ্য়ানের শরণাপন্ন হতে হয় না আর। আশপাশের বাজারদোকানই প্রতিদিন তার সাক্ষ্য় দেয়। শাকসবজি, আনাতপাতি, মাছ-মাংশ থেকে শুরু করে দুধ, ডিম সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। যদিও শহরের একটা বড় অংশের কাছে এই 'সামান্য়' মূল্য়বৃদ্ধি এমন কিছু না-হলেও তা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কাছে বড়সড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে আমাদের দেশে ছোটদের অপুষ্টির হার আরও বাড়বে। অর্থাৎ, হাড়জিরজিরে চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়েদের সংখ্য়া বাড়তে থাকবে। এমনতিতেই তো এখন সাব-সাহারান দেশগুলির চেয়েও খারার অবস্থায় রয়েছে এদেশের শিশুরা।
গত একবছর ধরে যেভাবে খাদ্য়দ্রব্য়ের দাম বেড়ে চলেছে, তাতে করে এখন অনেকেই আশঙ্কা করছেন, অদূর ভবিষ্য়তে এদেশের শিশুরা বড়সড় পুষ্টি বিপর্যয়ের মধ্য়ে পড়তে চলেছে। বিশেষ করে প্রান্তিক শ্রেণির শিশুরা। এখনই এদেশে শিশুদের মধ্য়ে একটা বড় অংশই অপুষ্টির শিকার। এমনকি সাব সাহারান দেশগুলির থেকেও শিশু-অপুষ্টিতে এগিয়ে রয়েছি আমরা। গত একদশকে এই অপুষ্টির হার ক্রমশ বেড়েছে। ন্য়াশানাল ফ্য়ামিলি হেলথ সমীক্ষা অন্তত এমন কথাই জানাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, দেশজুড়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমছে। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায়। সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, অন্য়ান্য় জিনিসের মধ্য়ে খাবারের দাম সবার আগে বাড়ছে আর তা বেশি করে বাড়ছে। তাই মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার সঙ্গেসঙ্গেই আগে খাবারের বাজেটে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। তাছাড়া মজার কথা হল, এদেশে অন্য়ান্য় খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর খাবারের দাম বেশি করে বাড়ছে।
এদিকে বাজারে মন্দা। চাকরি নেই বাকরি নেই। থাকলেও মজুরি বাড়ছে না। এমতাবস্থায় হাত পড়ছে পরিবারের পুষ্টিতে। সর্বাগ্রে যার শিকার হচ্ছে শিশুরা।
এই পরিস্থিতিতে ভরসা হল হল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি। কিন্তু সেখানে হয় বাজেট বরাদ্ধ বাড়ছে না। নয় তো ক্রমশ কাটছাঁট চলছে। বিশ্বে ক্ষুদার সূচকে কিছুদিন আগেই কয়েকধাপ নেমে গিয়েছিল আমাদের দেশ। খাওয়া না-খাওয়ার পালা এভাবে চলতে থাকলে এবার আরও বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে আমাদের শিশুরা।