
২০১৬ সালে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট উরিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, "রক্ত ও জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। তিনি সিন্ধু জল চুক্তির কথা উল্লেখ করছিলেন। এই চুক্তি অত্যন্ত 'উদার' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন মোদী। 'এই চুক্তির পুনর্বিবেচনার হুমকি সত্ত্বেও ভারত এখনও এটি মেনে চলছে বলেই' উল্লেখ করেন মোদী।
বুধবার কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত প্রথমবারের মতো Indus Waters Treaty (আইডব্লিউটিকে) রদ করেছে । পাকিস্তান 'আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস' পরিহার না করা পর্যন্ত ভারত এই চুক্তি 'স্থগিত' রাখবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর ফলে পাকিস্তানে ঠিক কী কী হতে পারে? ঠিক কতটা জলের অভাবে ভুগতে পারে পাকিস্তান?
চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল অভিন্ন নদীগুলোর জলপ্রবাহ থেকে পাকিস্তান যাতে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে।
দেশভাগের পর এই চুক্তিতে ঠিক হয়, পশ্চিমের তিন নদী—সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগা এবং পূর্বাঞ্চলের তিন নদী—বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর প্রবাহিত জল দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু উপত্যকার এই ছয় নদীর মোট ৭০ শতাংশ জল পাবে পাকিস্তান, ৩০ শতাংশ ভারত।
পশ্চিমের তিন নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে কিছুটা জল ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে ঠিকই, তবে তা যৎসামান্য। চুক্তি স্থগিতের কারণে সেখান থেকে জলপ্রবাহ এখন আর পাকিস্তানে যাবে না। যদিও অন্যান্য শাখা নদীর প্রবাহে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। এ সিদ্ধান্তের ফলে ওই তিন নদীর জল যা দিয়ে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশে পানীয় ও সেচের প্রয়োজন মেটানো হয়, তা ব্যাহত হতে পারে বিশেষত এই গ্রীষ্মে।
ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটলেও এই চুক্তি রদ করা হয়নি। কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরই ওই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
পাকিস্তানের কৃষি জমিতে যে জল সরবারহ করা হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই সিন্ধুর। করাচি, মুলতান, লাহোরের মতো বড় শহরগুলিতেও সিন্ধুর জল ব্যবহার করা হয়। জল না পেলে পাকিস্তানের কৃষিকাজ ও জলসেচ প্রকল্পের উপর বড় প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। পাকিস্তানের জিডিপির ২৫ শতাংশ নির্ভর করে গম, চাল, আখ, তুলো উৎপাদনের উপর। জলের অভাবে চাষের ক্ষতি হলে সার্বিক ভাবে প্রভাব পড়বে তাদের জিডিপির উপর। কৃষিকাজ ছাড়াও প্রভাব পড়তে পারে পাকিস্তানের মাংলা ও তারবেলা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও।
ফলত, করোনা এবং পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে আর্থিক সংকট তৈরি হয়। হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির উপর সিন্ধু চুক্তি বাতিল পাকিস্তানে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের।