
উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে আকস্মিক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের ফলে বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার মধ্যেই ধনখড়ের উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে AIIMS-এ ভর্তি হয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়। হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই তিনি ভর্তি ছিলেন। এরপর জুন মাসে উত্তরাখণ্ডের হুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোল্ডেন জুবিলী অনুষ্ঠানে অজ্ঞান হয়েও পড়েছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে গড়াচ্ছিল। ফলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই এই বড়সড় সিদ্ধান্ত।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু-কে লেখা তার অফিসিয়াল পদত্যাগপত্রে, ধনখড় লিখেছেন, “স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার জন্য, আমি সংবিধানের ৬৭(ক) ধারা অনুযায়ী ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করছি।”
৭৪ বছর বয়সী এই নেতা ২০২২ সালের আগস্ট মাসে পদ গ্রহণ করেছিলেন, তার কার্যকাল মূলত ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলার কথা ছিল। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনখড় রাজ্যসভার সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।
জগদীপ ধনখড়ের স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন?
জানিয়ে রাখি, এই মুহূর্তে সংসদের বাদল অধিবেশন চলছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এবার কে হবে উপরাষ্ট্রপতি? কীভাবেই বা হবে নির্বাচন? প্রসঙ্গত লোকসভা ও রাজ্যসভার সমস্ত সদস্যরা মিলেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। এমনকি মনোনীত সদস্যরাও ভোট দিতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন রাজ্যের বিধানসভার বিধায়করা ভোট দেন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তারা অংশ নেন না।
জানিয়ে রাখি, উপরাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব নিতে গেলে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং নূন্যতম ৩৫ বছর বয়স থাকতে হবে। এর পাশাপাশি রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার উপযুক্ত যোগ্যতা থাকতে হবে, আর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় ১৫০০০ টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে জমা দিতে হবে। কিন্তু ছয় ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে সেই অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
বলে রাখা ভালো, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রধানত সংবিধানের ৬৩ থেকে ৭১ ধারা এবং উপরাষ্ট্রপতি (নির্বাচন) বিধি, ১৯৭৪ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির পরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংবিধানিক পদ ধারণ করেন। যাদের নাম আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর অভিজ্ঞ সাংসদ হরিবংশ। ২০২০ সাল থেকে এই পদে আছেন হরিবংশ, যাঁকে সরকারের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।
ইতিহাসে তৃতীয়
ধনখড়ের পদত্যাগের ফলে , তিনি ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় উপরাষ্ট্রপতি হলেন, যিনি কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করলেন। আগের দুজন ছিলেন ভি ভি গিরি এবং আর ভেঙ্কটরমণ। তবে, তার পূর্বসূরীরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেছিলেন। এদিকে ধনখড়ের পদত্যাগ সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যগত কারণে।
সংবিধানিক প্রোটোকল অনুযায়ী, পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে একজন নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হবে। এই মধ্যবর্তী সময়ে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান উচ্চ কক্ষের কার্যক্রম তদারকি করবেন।
কেমন ভাবে হয় ভোটদান?
এক্ষেত্রে রাজ্যসভার মোট ২৪৫ জন সদস্য এবং লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্য ভোট দিয়ে থাকে। অর্থাৎ, মোট ভোট পড়ে ৭৮৮টি। আর এই নির্বাচন হয় প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন সিস্টেমে এবং সিঙ্গেল চান্স ভোট পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্রত্যেকটি ভোটার একটি মাত্র ভোট দেয় এবং পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীদের ক্রমানুসারে নম্বর দেয়। উল্লেখ্য, প্রথম পছন্দে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ভোট স্থানান্তরিত হয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের তালিকায় চলে যায়।