যে অযোধ্যা, যে গল্পের রামমন্দিরের কথা বারবার স্বপ্ন দেখাতো হিন্দুত্ববাদীদের তা চোখের সামনে এখন প্রতিভাত হচ্ছে। দিন কয়েক আগেই রামন্দিরের দেবতা রামলালা-র জন্য রূপোর দোলনার উপহার গিয়েছে। এহেন রামমন্দির এবার কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে?
২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন হয়। আর বছর দুয়েক পরেই নিষ্পত্তি ঘটে অযোধ্যা মামলার। এক ঐতিহাসিক রায়ের প্রেক্ষিতে এখন উত্তর প্রদেশের হিন্দুত্ববাদীদের স্বপ্নের রামমন্দির বাস্তবায়িত হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের অতিত রাজনীতির দিকে যদি তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে বারবারই এই অযোধ্যা ও রামমন্দির ইস্যুতে তপ্ত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। আর শুধু এই রাজ্য উত্তপ্ত হওয়া নয়, এই দুই ইস্যু প্রায় একশো বছর ধরে বিতর্ক খাড়া করে রেখেছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। যেখান থেকে বিভাজনের রাজনীতির তত্ত্বও খাঁড়া হয়েছে। যে বিভাজনের রাজনাতীর উপর কষাঘাত করেছে কংগ্রেস থেকে শুরু করে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, আজ সেই রাজনৈতিক তত্ত্বের নতুন দিশা কী হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। যে অযোধ্যা, যে গল্পের রামমন্দিরের কথা বারবার স্বপ্ন দেখাতো হিন্দুত্ববাদীদের তা চোখের সামনে এখন প্রতিভাত হচ্ছে। দিন কয়েক আগেই রামন্দিরের দেবতা রামলালা-র জন্য রূপোর দোলনার উপহার গিয়েছে। এহেন রামমন্দির এবার কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে? হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি (#MoodOfUP)- সমীক্ষাতেও এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। একজনজরে দেখে নেওয়া যাক কী উত্তর এসেছে-এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে।
জনমত সমীক্ষায় অংশ নেওয়াদের প্রশ্ন করা হয়েছিল- আসন্ন নির্বাচনে রাম মন্দির ইস্যু কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এর উত্তরে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ জানিয়েছেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রামমন্দির গড়পড়তা ইস্যু বলে মানছেন ২২ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশের ভোটে রামমন্দিরকে কোনও ইস্যু বলে মানতে রাজি নন ৩২ শতাংশ মানুষ। এদের দাবি এই ইস্যু এবারের বিধানসভা ভোটে গুরুত্ব পাবে না। এক্কেবারেই গুরুত্ব নেই বলে দাবি করেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি (#MoodOfUP)- সমীক্ষা-কে মোট ছয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছিল। এই ছয়টি জোনে রামমন্দির ইস্যু নিয়ে কোন অঞ্চলের মানুষ কী রায় দিয়েছেন- তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক। উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রামমন্দিরকে প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কানপুর-বুন্দেলখণ্ডের মানুষ। এই অঞ্চল থেকে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মানুষদের মধ্যে ৫০ শতাংশ দাবি করেছেন রামমন্দির এবারের ভোটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ব্রিজ অঞ্চলের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ একই দাবি করেছেন। এদের পিছনে যথাক্রমে রয়েছে আওয়াধ, কাশি ও গোরখ এবং পশ্চিম। আওয়াধ ও কাশির ৩০ শতাংশ করে উত্তরদাতা রামমন্দিরকে ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে মেনেছেন। গোরখের ২৫ শতাংশ এবং পশ্চিমের ১৪ শতাংশ মানুষ একই দাবি করেছেন। ভোটে রামমন্দিরকে গড়পড়তা ইস্যু দাবি করার তালিকায় সবার উপরে রয়েছে কানপুর-বুন্দেলখণ্ড। এখানকার ২৫ শতাংশ মানুষ রামমন্দির ইস্যুকে গড়পড়তা বলে মানছেন। কাশি-র ১৯ শতাংশ, আওয়াধের ১০ শতাংশ, গোরখের ১০ শতাংশ, ব্রিজের ১১ শতাংশ এবং পশ্চিমের ৩ শতাংশ মানুষ-ও রামমন্দিরকে গড়পড়তা বলে মানছেন। রামমন্দিরকে কম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলার তালিকায় শতাংশের হিসাবটা এরকম- গোরখ- ৩২ শতাংশ, ব্রিজ ৪১ শতাংশ, পশ্চিম ৬৪ শতাংশ, আওয়াধ ৪৫ শতাংশ, কাশি ৩৩ শতাংশ এবং কানপুর-বুন্দেলখণ্ড ২২ শতাংশ। এক্কেবারে গুরুত্ব নেই বলছেন- গোরখের- ২৮ শতাংশ, ব্রিজের ৬ শতাংশ, পশ্চিমের ১৭ শতাংশ, আওয়াধের ১৫ শতাংশ, কাশির ১৫ শতাংশ এবং কানপুর-বুন্দেলখণ্ডের ২১ শতাংশ মানুষ।
এই জনমত সমীক্ষায় আর একটি বিষয় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ রামমন্দির ইস্যু-কে নিয়ে যখন এত বিতণ্ডা, তখন সমীক্ষায় অংশ নেওয়াদের খুব কম সংখ্যকই আসন্ন বিধানসভা ভোটে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট না দেওয়ারই পক্ষপাতী। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মাত্র ৯ শতাংশ ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দেবেন বলে মানছেন। বরং দল ও প্রার্থী দেখেই ভোট দেওয়ার কথা বলছেন অধিকাংশ। প্রার্থী দেখে যে তারা ভোট দেবেন এমনটা বলছেন ৪২ শতাংশ মানুষ। দল দেখে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। শ্রেণি বা কাস্ট দেখে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ১১ শতাংশ মানুষ।
চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। এর সঙ্গে অবশ্যেই একটা গুরুত্ব তৈরি করেছিল অসম এবং তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিধানসভা নির্বাচনগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে আরও একটি বিধানসভা নির্বাচন সামনে রয়েছে যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। আর এই বিধানসভা নির্বাচন হল উত্তরপ্রদেশের। বলতে গেলে ২০১৭ সালে বিশাল জয় নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার তৈরি করে বিজেপি। এমনকী, যোগী আদিত্যনাথ-কে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে আরও এক বড় রাজনৈতিক চাল চেলেছিল গেরুয়া শিবির। প্রায় ৫ বছর শাসনকাল পূর্ণ করতে চলেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ২০২২ সালের শুরুতেই সেখানে বিধানসভা ভোট। খাতায় কলমের হিসাব বলছে এখনও ৭ মাস রয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের মেয়াদ। তার আগেই উত্তরপ্রদেশের মনের মেজাজ বুঝতে ময়দানে নেমে পড়েছে এশিয়ানেট নিউজ। জনমত সমীক্ষায় নাম করা সংস্থা জন কি বাত-এর সঙ্গে এশিয়ানেট নিউজ একটা তথ্যানুসন্ধান চালায়। যার নাম হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি (#MoodOfUP)-যা আসলে একটি জনমত সমীক্ষা(Opinion Poll)। এই সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মানুষের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি-র অভিজ্ঞতার একটা ঝোঁকের সন্ধান করা হয়েছে। আর এইখান থেকে পাওয়া সমীক্ষার মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টিকোণের সন্ধান করা হয়েছে। ভোট আসতে আসতে সন্দেহ নেই যে এই মানসিকতা ও দৃষ্টিকোণের অনেকটাই পরিবর্তন ঘটবে- ফলে সেক্ষেত্রের তথ্যের তারতম্য হওয়াটাও এক্কেবারে নিশ্চিত।