উন্নয়ন করা হবে হ্রদের
তার জন্য কাটা পড়বে ৬৩১৬টি গাছ
এলাকার বাস্তুতন্ত্রই নষ্ট হয়ে যাবে, বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা
রুখে দাঁড়ালো নমো বেঙ্গালুরু ফাউন্ডেশন
বেঙ্গালুরুর সিংগনায়াকানাহাল্লি হ্রদকে আশেপাশের বেশ কয়েকটি হ্রদের জন্য ফিডার হ্রদে পরিণত করতে এর তীরে অবস্থিত ৬৩১৬টি পূর্ণবয়স্ক গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্নাটক সরকার। এর ফলে সেচের জন্য পর্যাপ্ত জলও মজুত করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে ওই এলাকার বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। আর তাই সরকারের হ্রদ উন্নয়ন প্রকল্পকে সমর্থন করলেও এই হ্রদের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপের আগে নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার দাবি জানালো নমো বেঙ্গালুরু ফাউন্ডেশন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন পরিবেশ সংরক্ষণবিদ, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সমাজকর্মী, বন্যপ্রাণ উত্সাহী এবং বন্যপ্রাণ ফটোগ্রাফারদের একটি দলকে সিংগনায়াকানাহাল্লি হ্রদটি পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছিল। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন নমো বেঙ্গালুরু ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার বিনোদ জ্যাকব। বিশেষজ্ঞ দলটি জানিয়েছে, ওই হ্রদের তীরে নিজের খেয়ালে গড়ে উঠেছে প্রকৃতিক বাস্তুতন্ত্র। পূর্ণবয়স্ক গাছের ঘন অরণ্যে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন পাখি, পতঙ্গ, প্রজাপতি। এমনকী জাতীয় পাখি ময়ূরও রয়েছে সেখানে। কয়েকটি বিপন্ন প্রজাতির পাখিও জায়গা করে নিয়েছে সেখানে। এই অরণ্য তাদের সকলের আবাসস্থল।
শুধু তাই নয়, সিংগনায়াকানাহাল্লি হ্রদ সংলগ্ন অঞ্চলে একটি বৃহৎ তৃণভূমিও রয়েছে। সেখানে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি থেকে গবাদি পশুরা আসে চরতে। কয়েক বছর আগে বন বিভাগ থেকে এই প্রাকৃতিক অরণ্যভূমিতে করঞ্জি গাছের চারাও রোপণ করেছিল। সেই গাছগুলিও রয়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের এই অনুসন্ধানগুলি কিন্তু, সরকারের বন দফতরের ওয়েবসাইট, aranya.gov.in-এ জানানো হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও এই বিষয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই অরণ্য ওই হ্রদ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের উৎস। আর ওই বাস্তুতন্ত্র বহু প্রজন্ম ধরে আশেপাশের গ্রামগুলির সহায়।
এই অবস্থায় নমো বেঙ্গালুরু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হ্রদের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তা সবুজ ধ্বংস করে করা উচিত নয়। ৬৩১৬টি গাছের উপর কুড়ুল চালালে, তা, পরিবেশগত বিপর্যয়ের সামিল হবে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। গাছ কাটার বিরুদ্ধে তারা গণসাক্ষর সংগ্রহ করছে। হ্রদে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুক, এমনটাই চাইছে তারা। নমো বেঙ্গালুরু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বেঙ্গালুরু পৌরসভা এবং বন বিভাগকে এই বিষয়টি তদন্ত করারও অনুরোধ জানিয়েছে।