সেদিন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় কারা বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল, পুলিশ না পড়ুয়ারা? গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে দিল্লিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্রশ্ন। পড়ুয়ারা বরাবর অভিযোগ করে এসেছেন, সেদিন পুলিশ বিনা প্ররোচনায় মারমুখী হয়ে উঠেছিল। অন্য়দিকে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন দিল্লি পুলিশ দাবি করে এসেছে, পডু়য়ারাই সেদিন পুলিশকে আক্রমণ করেছিলেন। তাই আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছিল। মাসদুয়েকের এই বিতর্কে এবার কি তাহলে ছেদ পড়ল? কারণ, সদ্য় পাওয়া এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ লাইব্রেরির ভেতর ঢুকে বই পড়তে থাকা ছাত্রছাত্রীদের একেবারে বিনা প্ররোচনায় বেধড়ক পেটাচ্ছে।
কী দেখা যাচ্ছে সেই ফুটেজে?
অন্য়ান্য় সিসিটিভির ফুটেজগুলো গায়েব হয়ে গেলেও ওইদিনের একটি ফুটেজ অক্ষত ছিল। আর সদ্য় প্রকাশিত সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ছে পুলিশ। সেখানে পড়ুয়ারা চুপচাপ নিজেদের মতো বই পড়ছেন। কিন্তু কোনওরকম প্ররোচনা ছাড়াই বই পড়তে থাকা পড়ুয়াদের বেধড়ক মারছে পুলিশ। শুধু পড়ুয়াদের পেটানোই নয়। সেইসঙ্গে নির্বিচারে লাইব্রেরি ভাঙচুর করছে দিল্লি পুলিশ। সম্প্রতি জামিয়া কোর্ডিনেশন কমিটির তরফে এই ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই কমিটির পক্ষ থেকে এই ফুটেজ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়-- এই সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ করছে সেদিন পুলিশ কীরকম নৃশংস আচরণ করেছিল। বলা হয়, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ওল্ড রিডিং হল লাইব্রেরির ভেতর বসে পরীক্ষার জন্য় প্রস্তুতি নিতে থাকা পডুয়াদের কীরকম লাঠি চালিয়েছে তারা। কমিটির পক্ষ থেকে ওইদিনের ঘটনায় পুলিশকে 'স্টেট স্পনসর্ড টেরোরিস্ট' বা 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী' বলে অভিহিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন তৈরি হওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়ারাও। যার মধ্য়ে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয় ছিল অন্য়তম। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে ব্য়াপক সংঘর্ষ বাধে ওই বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়াদের। পুলিশের অভিযোগ, পড়ুয়ারা পুলিশের ওপর পাথর ছুড়তে থাকে। বেশ কয়েকটি গাড়ি ও বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশকে বাধ্য় হয়ে লাঠি চালাতে হয়। যদিও পড়ুয়াদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালায় ও বিশ্ববিদ্য়ালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে। ওইদিন কার্যত রণক্ষেত্রে হয়ে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়। পুলিশ-সহ মোট ৬০ জন আহত হন ওই দিনের ঘটনায়।