
জঙ্গিদের অর্থের উৎস: ড্রাগ আর হাওয়ালার টাকাতেই ফুলেফেঁপে উঠছে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে বসে থাকা মাস্টারমাইন্ডদের কথোপকথন ইন্টারসেপ্ট করতে গিয়ে নয়া তথ্য সামনে এসেছে। জৈশ ই মহম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের একটি ভাষণ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। সেখানে জিহাদিদের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থার কথা বলতে শোনা গিয়েছে জৈশ প্রধানকে। এখন প্রশ্ন হল এত টাকা কোথায় পায় জঙ্গিরা।
তদন্তকারীদের বক্তব্য মাদকের ব্যবসা আর হাওয়ালা- এই দুই পথে টাকা জোগাড় করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। জানা গিয়েছে, মাদকের বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে এসেছিল অনেক আগেই। কিন্তু গুজরাটের মুন্দ্রা পোর্টে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার মূল্যের হেরোইন উদ্ধার হয়। সেই হেরোইন উদ্ধার হওয়ার পরে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, শুধুমাত্রা অস্ত্র আর জঙ্গি দিয়ে নয়, মাদক পাঠিয়েও ভারতে বিষ ঢোকাচ্ছে ভারতে।
জানা গিয়েছে, মুন্দ্রায় পাওয়া হেরোইন পাঠানোর মূলে রয়েছে লস্কর। সে কথা আদালতে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে এনআইএ। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শুধু ভারত নয়, লস্কর, জৈশের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো এই ড্রাগের ব্যবসায় জাল আফ্রিকা, আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।
জানা গিয়েছে, মূলত দু ভাবে এই ড্রাগের ব্যবসা চলে। সরাসরি ড্রাগ গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করে জঙ্গিরা। তা না হলে, দেশ ঘুরিয়ে হাত বদল হাতবদল করে তা পাঠানো হয় গন্তব্যে।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, মাদক হোক বা হাওয়ালা- জঙ্গিদের নিশানায় ভারত থাকবেই। ২০২০ তে হরিয়ানায় একটি মসজিদে হাওয়ালার পথ ধরে পাকিস্তান থেকে টাকা ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। সেই টাকা পাকিস্তান থেকে দুবাই হয়ে ভারতে ঢোকে।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ছিল সেই ভয়ানক দিন। যেদিন দুপুরে জঙ্গিদের গুলিতে প্রয়াত হন ২৬ জন সাধারণ মানুষ। সকলেই ছিলেন কাশ্মীরের পর্যটক। প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেছিলেন যে, জঙ্গিরা ধর্ম জেনে হত্যা করা হয়। বেছে বেছে হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটে পেহলগাঁও-র বৈসরন উপত্যকায়। যা মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত। সেদিন পর্যটকদের রক্ত লাল হয়ে যায় মিনি সুইৎজারল্যান্ড।
এই পেহলগাঁও কাণ্ডে লস্কর ই তৈবা-র ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট দায়ি বলে অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে এখনও চলছে তদন্ত। তদন্ত করছেন সেনা সদস্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে। তেমনই সন্দেহজনক কিছু দেখলে বোম্ব দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। করা হচ্ছে হামলা।
এদিকে জানা গিয়েছিল, এই হত্যার ছক দীর্ঘদিন ধরে করা হয়। ২২ এপ্রিল হামলার ঠিক আগে ১-৭ এপ্রিল রেইকি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। একাধিক রিসর্টে রেইকি করেছিল জঙ্গিরা। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছিল কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকা। যা মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত। ২২ এপ্রিল দুপুরে ৫-৬ জন জঙ্গি সেখানে হাজির হয়েছিল। দু-তিনটে দলে ভাগ হয়ে ৪০-৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ধর্মীয় পরিচয় দেখে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। ঘটনাস্থলে সেদিন মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জন পর্যটক ও ১ জন স্থানীয়ের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু পরে তারা সুস্থ আছেন বলে জানা যায়।
২২ এপ্রিল হত্যা করা হয়েছিল শুধু হিন্দু পুরুষদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে দাবি করেছিলেন যে, পুরুষদের প্যান্ট খুলতে বলা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু কিনা সে বিশ্বাস নিশ্চিত করার জন্য। পুরুষদের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল জঙ্গিরা। তারপর এই বিষয় নিশ্চিত করে গুলি করা হয়। পরে এই বিষয়টি সঠিক বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরাও। কারণ প্রায় ২০ জনের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল, আর সে কারণে এই ঘটনা নিশ্চিত বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।