বড়দিনে এক মাস পূর্ণ করল দিল্লির উপকণ্ঠে চলা কৃষক আন্দোলন। এদিনও আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন নতুন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত কৃষি আইন প্রত্যাহার করা না হবে ততদিন তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও বার্তা দিয়েছিলেন। কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয় নিয়েই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আচোলনা করবেন বলেও জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজনাথ সিং প্রায় স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন এখনই কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে এদিন বিজেপে কৃষি আইনের পক্ষে প্রাচারে নামা ছাড়াও একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষক আন্দোলন ইস্যুতে সরাসরি নিশানা করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। তিনি বলেন, বিরোধীরা এমএসপি বা ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে। এমএসপি ব্যবস্থা এতদিন পর্যন্ত যেমন ছিল আগামী দিনে তেমনই থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অমিত শাহ বলেন নরেন্দ্র মোদী যতদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন ততদিন এমএসপি বহাল থাকবে। এপিএমসি বা মাণ্ডি প্রথা ভেঙে ফেলা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। দিল্লি সংলগ্ন একটি গ্রামে এদিন তিনি সমাবেশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে সবরকম আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্যদিকে কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের জন্য নতুন কৃষি আইন লাগু করতে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এক থেকে দেড়বছর চলুক নতুন কৃষি আইন। তারপরে যদি দেখা যায় নতুন আইনের মাধ্যমে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন না তাহলে তা রদ করে দেওয়া হবে। আগামী দুবছরের জন্য কৃষি আইন নিয়ে একটি পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হোক বলেও তিনি আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রাজনাথ। প্রতিবাদকারী সকল কৃষকদের আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যে প্রায় স্পষ্ট কৃষি আইন প্রত্যাহারের দিকে হাঁটছে না তারা। দিন দুই আগে একই রকম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। তিনি জানিয়েছেন দেশ বর্তমানে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর সেখান থেকে জল্পনা শুরু হয়েছে দিল্লির উকণ্ঠে চলা কৃষক আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন শাহিনবাগ আন্দোলনের মত অসমাপ্ত থেকে যাবে কৃষক আন্দোলনও। শাহিনবাগ আন্দোলন চলেছিল প্রায় একশো দিন ধরে। আন্দোলনকারীদের কাছে মাথা নত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। নাগরিক সংশোধনী আইন নিয়ে অসন্তোষ থেকে গেলেও আই লাগু হবে বলেই সূত্রের খবর। তেমনই আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকার যে কৃষি আইন লাগু করতে মরিয়া তার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে শুরু হয়েছে।