
Pahalgam Attack: ফের প্রকাশ্যে এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য। সেদিন পেহলগাঁওতে তাঁর সামনেই তাঁর স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। অপরাধ ছিল একটাই, যে তারা হিন্দু। তাঁদের সামনেই একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। সেই হামলার ভিডিও রেকর্ডিং পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রায় গিয়েছে ২৬ জন পর্যটকের। তার মধ্যে আছেন শুভম দ্বিবেদী। এখনও স্বামী চলে যাওয়ার সেই ঘা দগদগে। স্বামীর চলে যাওয়ার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এখন আস্তে আস্তে সব মনে পড়ছে। শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রী ঐশ্বন্য দ্বিবেদীর কথায় এখন শুধুই আতঙ্ক। আর একের পর এক সন্দেহ।
তিনি দাবি করেছেন, সন্ত্রাসবাদীরা সঙ্গে করে একে ৪৭ নিয়ে আসেনি। বরং সেখানে কেউ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল বৈসরন উপত্যকাতেই।
তিনি এক নিউজ চ্যানেলকে জানান, বৈসরনে ওঠার আগেই শুভ ঘোড়ার মিলাককে জিজ্ঞাসা করেছিল সেখানে নেটওয়ার্ক আছে কি না। তখন ঘোড়ার সহিস বলেছিলেন পুরো নেটওয়ার্ক আছে। এখন ঐশ্বন্যার মনে হচ্ছে, যদি একবার সে বলত, নেটওয়ার্ক নেই তাহলে যেতেন না তারা। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদী হামলা না হওয়া পর্যন্ত কাশ্মীরে তারা নিরাপদ ছিলেন। মনে সন্দেহের দানা বাঁধেনি। চারপাশে এত পর্যটক। এত ভিড়। এর মধ্য যে তলায় তলায় চক্রান্ত চলছিল কে বুঝবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটু একটু দূরত্বে ভারতীয় সেনার জওয়ানদের দেখতে পাচ্ছিলাম ওপরে ওঠার সময়। তাই আমারা আশেপাশের মানুষদের কথাতেও সন্দেহ করিনি। এখন আমার মে পড়ছে, তাদের কথার মধ্যে সন্দেহজনক অনেক কিছু ছিল। তারা জিগ্যেস করছিল কারা কারা সঙ্গে এসেছে। জোড়ায় জোড়ায় চলতে বলেছিল।
তিনি আরও দাবি করেছেন যে, হামলাকারীরা সাধারণ জিন্স পরে ছিল। তাদের কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না। তাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল ওখানেই। সেখানেই যারা শুটিং, শাল বিক্রি করেছিল, সম্ভবত তারাই সরবরাহ করেছে।
তিনি জানান, একজন লোক সেখানে একাই ভেড়া চরাচ্ছিল। এত বড় মাঠে সে একা ভেড়া চরাচ্ছিল, কে জানে কেন? আমি জানি না সেও সন্দেহজনক কি না। সে পুরোপুরি ঢাকা পোশাক পরে ছিল। কে জানে সেই পোশাকের আড়ালে কিছু লুকিয়ে রেখেছিল কি না। … আমাদের পরিবারের লোকেরা ওপরে যেতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু ঘোড়ার মালিক তাদের বলেছিল ওপরে যান খুব সুন্দর। এ নিয়ে ঘোড়ার মালিকের সঙ্গে বিতর্ক হয়েছিল। আমার শ্বশুর বলেছিলেন, তুমি পুরো টাকা নিয়ে নাও, কিন্তু আমরা সেখানে যাব না। তখন সে বলতে লাগল টাকার কোনও কথা নেই, আর তারপর ১০ মিনিট তর্কবিতর্কের পর আমরা ওপরে গেলাম।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ছিল সেই ভয়ানক দিন। যেদিন দুপুরে জঙ্গিদের গুলিতে প্রয়াত হন ২৬ জন সাধারণ মানুষ। সকলেই ছিলেন কাশ্মীরের পর্যটক। প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেছিলেন যে, জঙ্গিরা ধর্ম জেনে হত্যা করা হয়। বেছে বেছে হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটে পেহলগাঁও-র বৈসরন উপত্যকায়। যা মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত। সেদিন পর্যটকদের রক্ত লাল হয়ে যায় মিনি সুইৎজারল্যান্ড।
এই পেহলগাঁও কাণ্ডে লস্কর ই তৈবা-র ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট দায়ি বলে অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে এখনও চলছে তদন্ত। তদন্ত করছেন সেনা সদস্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে। তেমনই সন্দেহজনক কিছু দেখলে বোম্ব দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। করা হচ্ছে হামলা।
এদিকে জানা গিয়েছিল, এই হত্যার ছক দীর্ঘদিন ধরে করা হয়। ২২ এপ্রিল হামলার ঠিক আগে ১-৭ এপ্রিল রেইকি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। একাধিক রিসর্টে রেইকি করেছিল জঙ্গিরা। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছিল কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকা। যা মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত। ২২ এপ্রিল দুপুরে ৫-৬ জন জঙ্গি সেখানে হাজির হয়েছিল। দু-তিনটে দলে ভাগ হয়ে ৪০-৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ধর্মীয় পরিচয় দেখে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। ঘটনাস্থলে সেদিন মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জন পর্যটক ও ১ জন স্থানীয়ের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু পরে তারা সুস্থ আছেন বলে জানা যায়।
২২ এপ্রিল হত্যা করা হয়েছিল শুধু হিন্দু পুরুষদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে দাবি করেছিলেন যে, পুরুষদের প্যান্ট খুলতে বলা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু কিনা সে বিশ্বাস নিশ্চিত করার জন্য। পুরুষদের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল জঙ্গিরা। তারপর এই বিষয় নিশ্চিত করে গুলি করা হয়। পরে এই বিষয়টি সঠিক বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরাও। কারণ প্রায় ২০ জনের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল, আর সে কারণে এই ঘটনা নিশ্চিত বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।