ধর্ষণের শিকার মেয়ে, গোটা গ্রামকে আমিষ ভোজ খাওয়াতে হবে বাবাকে

  • মধ্য প্রদেশের রাজগড় জেলার ঘটনা
  • নির্যাতিতার বাবাকেই অমানবিক নিদান
  • ধর্ষণে অপবিত্র হয়েছে নির্যাতিতা
  • শুদ্ধিকরণের জন্য ভোজ দেওয়ার নির্দেশ পঞ্চায়েতের

debamoy ghosh | Published : Jun 18, 2019 4:12 AM IST / Updated: Jun 18 2019, 09:43 AM IST

মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।  ফলে তার শুদ্ধিকরণ করতে হবে। শুদ্ধিকরণের উপায়ও বাতলে দিল গ্রামেরই পঞ্চায়েত। তাদের নিদান, ধর্ষিতার বাবাকে গ্রামের একশোজনকে আমিষ ভোজ খাওয়াতে হবে। 

শিউরে ওঠার মতো এই ঘটনাই ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলায়। দুঙ্গারপুর গ্রামের সতেরো বছর বয়সি ওই নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতের নির্দেশ মেনে ভোজের আয়োজন না করলে তাঁদের পরিবারকে একঘরে করে রাখার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ওই নাবালিকাকে একজন নিচু জাতের যুবক ধর্ষণ করেছে, তাই ওই নাবালিকা অপবিত্র হয়ে গিয়েছে বলেই মত গ্রামের পঞ্চায়েতের মাথাদের। গত জানুয়ারি মাসে এই ঘটনা ঘটেছিল। তার পরে অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু তাতে তো নির্যাতিতার শুদ্ধিকরণ হয়নি। ফলে তার মাশুল দিতে হবে নির্যাতিতার বাবাকেই।

এই নিদানের পর থেকেই গ্রামে কারো বাড়ির পারিবারিক অনুষ্ঠানেও ওই পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। তাঁরা ডাকলেও কেউ তাঁদের বাড়িতে যান না। 

কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও পঞ্চায়েতের নিদান মানার সাধ্য নেই ওই অসহায় পিতার। আবার সামাজিক ভাবে একঘরে হয়ে থাকাও তাঁর পক্ষে দুঃসহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'পঞ্চায়েত থেকে আমাকে গ্রামে ভোজ দিতে বলছে। কিন্তু আমার কাছে তো অতো টাকাই নেই। গ্রামের কোনও অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয় না। এভাবে একঘরে হয়েও আমি বেঁচে থাকতে পারছি না।' অসহায় পিতার আর্তিতেও অবশ্য সিদ্ধান্তে অনড় গ্রাম পঞ্চায়েতের মাথারা। তাঁদের এক কথা, মেয়েটির শুদ্ধিকরণ না হলে ওই পরিবারকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো যাবে না।

জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার বাবাকে দিয়ে রীতিমতো মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, পঞ্চায়েতের নিদান মেনে তিনি ওই গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামে দেড়শো থেকে দুশোজন অতিথিকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াবেন। যতদিন না তিনি এই কাজ করছেন, ততদিন তাঁদের একঘরে করেই রাখা হবে। লিখিত এই বয়ানের নীচে মেয়েটির বাবাকে দিয়ে সইও করানো হয়েছে। 

পুলিশের অবশ্য দাবি, ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পেয়ে তারা গ্রামে গিয়ে তদন্ত করলেও সেরকম কোনও অভিযোগই সামনে আসেনি। তবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করতেই গ্রামের মাথারা কিছুটা নরম হয়েছে। এখন তাদের দাবি, শুদ্ধিকরণের জন্য ওই পরিবারকে সত্যনারায়ণের পুজোর আয়োজন করতে হবে। 

জানুয়ারি মাসে ওই নাবালিকার ধর্ষণ হওয়ার পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ জানানো হয়। আট দিন বাদে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। সেই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ষণের খবর জনসমক্ষে চলে এসেছে, এই যুক্তি দিয়ে উল্টে নির্যাতিতার বাবাকেই দায়ী করে অমানবিক এই নিদান দিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। 

Share this article
click me!