
পাঞ্জাবের মোহালি জেলার মানকপুর শরীফ গ্রামে এমন একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত একটি প্রস্তাব পাস করেছে এবং পরিবারের সম্মতি ছাড়া প্রেম বিবাহের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্ত বিতর্কে ঘেরা, যাকে অনেক নেতা এবং মানবাধিকার কর্মীরা অসাংবিধানিক এবং অপ্রাসঙ্গিক বলে অভিহিত করেছেন।
পঞ্চায়েত কি সংবিধানের সীমা লঙ্ঘন করেছে?
৩১ জুলাই পঞ্চায়েতের সর্বসম্মতিতে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করা দম্পতিরা গ্রামে থাকতে পারবেন না বা আশেপাশের এলাকায় বসতি স্থাপন করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, এই ধরণের দম্পতিদের আশ্রয় বা সমর্থনকারী গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সতর্ক করা হয়েছে। গ্রামের সরপঞ্চ দলবীর সিং বলেন, "এটি কোনও শাস্তি নয় বরং আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য নেওয়া একটি পদক্ষেপ।" তিনি জানান যে, ২৬ বছর বয়সী দবিন্দর তার ২৪ বছর বয়সী ভাগ্নী বেবিকে বিয়ে করার একটি সাম্প্রতিক ঘটনার পর এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। দম্পতি এখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন, তবে এই ঘটনাটি এখানে বসবাসকারী ২,০০০ গ্রামবাসীর উপর প্রভাব ফেলেছে। "আমরা প্রেম বিবাহ বা আইনের বিরুদ্ধে নই, তবে আমাদের পঞ্চায়েতে আমরা এটির অনুমতি দিচ্ছি না," দবিন্দর সিং বলেন। প্রস্তাব অনুসারে, এই ধরনের বিবাহ প্রতিরোধের দায়িত্ব সমগ্র সম্প্রদায়ের। পঞ্চায়েত পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকেও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রেম বিবাহ কি সামাজিক মর্যাদার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে?
গ্রামের কিছু যুবক এবং বাসিন্দা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে গ্রামের সংস্কৃতি এবং পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং আজকের সময়ে সম্পর্কের মর্যাদা ভেঙে যাচ্ছে। তবে, অন্যদিকে, অনেক নাগরিক সংগঠন, নেতা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পঞ্চায়েতের এই পদক্ষেপকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
রাজ্য কী করবে?
প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে মোহালির অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার সোনম চৌধুরী এবং পুলিশ সুপার মোহিত আগরওয়াল স্পষ্টভাবে বলেছেন যে উভয় পক্ষই প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারা তাদের ইচ্ছামত বিবাহ করতে আইনত স্বাধীন। এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে যদি তা পাওয়া যায় তবে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবাধিকার বনাম পঞ্চায়েতের চাপ: কার হাত থাকবে?
কংগ্রেস সাংসদ ধর্মবীর গান্ধী এই প্রস্তাবকে "তালিবানি হুকুম" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে প্রেম করার এবং জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্কের মৌলিক অধিকার। পাঞ্জাব রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন রাজ লালি গিল এটিকে সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন এবং তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।