
রাশিয়া থেকে সস্তা দরে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলি তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে দুর্বল করতে আমেরিকা এবং তার মিত্ররাষ্ট্রগুলি রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বিক্রি বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা তীব্রভাবে বাড়িয়েছে, যা আমেরিকার ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, আমেরিকা ২৫% শুল্ক এবং অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণা করেছে।
তবে, ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা জাতীয় স্বার্থ এবং বাজারের শক্তির উপর ভিত্তি করে জ্বালানি নীতি নির্ধারণ করে। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, 'আমাদের জনগণের জ্বালানি চাহিদা মেটানোই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। এর জন্য আমরা কোনও বাইরের চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না।'
ভারত রাশিয়া থেকে কী কী কেনে?
রাশিয়ার সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় কূটনৈতিক এবং কৌশলগত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ২০২৪-২৫ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫-৪০% রাশিয়া থেকে এসেছে। মে ২০২৫ সালে ভারত দৈনিক ১.৯৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যা ১০ মাসের সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি, ২০২৩ সালে ১০.০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন তাপীয় কয়লা (মোট জ্বালানি আমদানির ৬%) রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে।
রাশিয়া ভারতের কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার, যেমন ইউরিয়া সরবরাহ করে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, গত দুই দশকে ভারত ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র, S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোজাহাজ কিনেছে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করলে কী হবে?
রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করলে ভারতে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে এবং রাজনৈতিক চাপও তৈরি হতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে ভারতকে দেশীয় তেল উৎপাদন ও অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, গায়ানা এবং কানাডার মতো অন্যান্য দেশ থেকে তেল আমদানিতে জোর দিতে হবে।
আমেরিকার আপত্তি কেন?
আমেরিকার অভিযোগ, রাশিয়ার তেল বিক্রি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। ভারতের রাশিয়ার তেল কেনা এই অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে বলে আমেরিকা মনে করে, যা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যের বিরোধী। তবে, ভারত তার জ্বালানি সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অবস্থান বজায় রেখেছে।