নাজিবুল্লাহ থেকে ঘানি, আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের দুই অধ্য়ায়ের ফারাক

নাজিবুল্লাহকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তালিবানরা। কিন্তু ঘানির ক্ষেত্র সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি দেখা গেল। 
 

Asianet News Bangla | Published : Aug 17, 2021 3:10 PM IST / Updated: Aug 17 2021, 08:42 PM IST

আশরাফ ঘানি সরকারের পতন হয়েছে তালিবানদের হাতে। কিন্তু তিনি প্রথম আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি নন, যাঁকে উৎখাত করল তালিবানরা। তাঁর আগে মোহম্মদ নাজিবুল্লাহকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল এই তালিবানরা। যদিও ঘানির মত ততটা ভাগ্যবান ছিলেন না নাজিবুল্লাহ। কারণ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্য়া করেছিল তালিবানরা। অন্যদিকে রুশ দূতাবাসের রিপোর্ট অনুযায়ী ঘানিতে টাকাপয়সা গুছিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে প্রচ্ছন্নভাবে মদত দিয়েছিল তালিবানরা। 

কে এই নাজিবুল্লাহ?
মোহম্মদ নাজিবুল্লাহ পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। সোভিয়েত রাশিয়ার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় আফগানিস্তানে অলিখিতভাবে রাজ করত তৎকালীন কমিউনিস্ট রাশিয়া। তাই মস্কোর আশীর্বাদে সহজেই আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান নাজিবুল্লাহ। কিন্তু সেই সময় বড়ই কঠিন ছিল। সোভিয়েত পতনের সময়। ১৯৯০-৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়। তারপরই প্রায় ১২টি দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সেই সময়ই আফগানিস্তানে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে, পরিবর্তে বাড়তে থাকে মুজাহিদিনদের রাজ। 

Afghanistan Crisis: তালিবানদের সমর্থন 'নয়', খোয়াতে হতে পারে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

নাজিবুল্লাহকে হত্যা

একটা সময় আফগানিস্তানের নাম ছিল ডেমোক্রেটিক রিপাব্লিক অফ আফগানিস্তান। নাজিবুল্লাহ তখন আফগানিস্তানকে ধর্মরাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হয়নি মুজাহিদিনরা।সেই সময়ই তৎকালীন আফগান সরকারের দুর্ণীতিকে হাতিয়ার করেই ক্ষমতা দখলের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল তালিবানরা। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে জেহাদে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদিনরা আফগান সরকারে ফেলে দিতে বদ্ধপরিকর হয় নতুন করে সংঘটিত হয়। সোভিয়েতের পতনের পর আফগানিস্তান নিয়ে আমেরিকার উৎসহে ভাঁটা পড়ে। কিন্তু সেই সময় থেকেই পাকিস্তান তালিবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আসছিল। এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে তালিবানদের যোগাযোগ অক্ষুন্ন রয়েছে। 

১৯৯২ সালে তালিবানরা কাবুল দখল করে নেয়। নাজিবুল্লাহ পদত্যাগ করেন। কিন্তু সেই সময় নাজিবুল্লার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ভারত। তাঁকে এদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। আগেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল নাজিবুল্লাহের পরিবার। কিন্তু বিধির বিধান, বিমানে ওঠার আগেই তৎকালীন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষীরাই তাঁকে  বাধা দিয়েছিল। তারপর তিনি কাবুলেই থেকে গিয়েছিলেন। তালিবানরা কাবুল  দখল করে  নেয়। সেই সময় নাজিবুল্লাহকে পালোনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু নাজিবুল্লাহ তাতে রাজি ছিলেন না। তিনি ভাবতেও পারেননি তালিবানরা তাঁকে হত্যা করতে পারে- কারণ জাতিতে তিনিও তালিবান নেতাদের মত পাশতুন। নাজিবুল্লাহ তালিবান অধিকৃত কাবুলে রাষ্ট্রসংঘের একটি কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তায় ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টম্বর রাষ্ট্রসংঘের কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে তালিবানরা। ভিতর থেকে বাইরে বের করে এনে নাজিবুল্লাহর ওপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। প্রেসিডেন্টকে খুন করে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Afghanistan Crisis: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আফগানিস্তান নিয়ে, রয়েছেন অজিত ডোভাল  

আশরাফ ঘানিকে মদত

সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি দেখা গেল আশরাফ ঘানির ক্ষেত্রে। ২০১৪ সালে আফগান বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন আশরাফ ঘানি। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিবানদের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। সেই সময় প্রায় ৩ লক্ষ মার্কিন সেনা ছিল। কিন্তু আশরাফ ঘানির সরকারও নাজিবুল্লাহের সরকারের মত দূর্ণীতিতে তলিয়ে গিয়েছিল। 

তালিবান জমানায় ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন, আফগানিস্তান উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ঢেলে ছিল ভারত

তবে একবার তালিবানরা প্রায় মিছিল করেই কাবুলে ঢুকেছিল। তালিবানরা কাবুলে ঢোকার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘানি দেশ ছেড়েপালিয়ে যান। রুশ দূতাবাস জানিয়েছে ঘানি দেশ ছাড়ার আগে চারটি গাড়ি আর একটি হেসিকপ্টারে করে নগদ অর্থ বোঝাই করে নিয়ে গিয়েছেন। আশরাফ ঘানির মত নাজিবুল্লাহও তালিবানদের কাথে হার স্বীকার করেছিল। কিন্তু তালিবানরা ঘানিকে টাকাপয়সা সমেত পাতালে দিয়েছিল। আর নাজিবুল্লাহকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। কেন তালিবানদের এই পরবর্তন তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

Share this article
click me!