
গড়চিরোলি (মহারাষ্ট্র): দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক মাওবাদী কমান্ডারদের মধ্যে অন্যতম মাল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি অবশেষে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। ৪০ বছর ধরে জঙ্গলে 'লাল সন্ত্রাস' ছড়ানো এই দুর্ধর্ষ নকশাল নেতা এখন পুলিশের সামনে নতজানু। ভূপতি তার ৬০ জনেরও বেশি সঙ্গী, একে-৪৭ এবং ইনসাস রাইফেল সহ ৫০টিরও বেশি অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলিতে এই আত্মসমর্পণকে নকশাল বিরোধী অভিযানের জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভূপতি অর্থাৎ মাল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাও, বয়স ৬৯ বছর। একসময় এই নাম পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আতঙ্কের আরেক নাম ছিল। সে নিষিদ্ধ সংগঠন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিল—এই সংগঠনটিই সারা দেশে নকশাল হামলার পরিকল্পনা করত। ভূপতিকে সোনু, সোনু দাদা, অভয়, মাস্টার, বিবেক এবং ভেনু সহ অনেক নামে ডাকা হতো। মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে তার মাথার ওপর ১০ কোটি টাকারও বেশি পুরস্কার ছিল।
সে ১৯৮০-র দশকে পিপলস ওয়ার গ্রুপ (PWG)-এর সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ধীরে ধীরে পুরো "রেড করিডোর"-এ সন্ত্রাসের মুখ হয়ে ওঠে। সে সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনেরও সদস্য ছিল, যা নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার কৌশল নির্ধারণ করত।
ভূপতির বিরুদ্ধে অনেক রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ষড়যন্ত্র এবং তা কার্যকর করার অভিযোগ রয়েছে। গড়চিরোলি, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানায় হওয়া কয়েক ডজন হামলায় তার দলের হাত ছিল। সিআরপিএফ, এসটিএফ এবং ডিআরজি-র অনেক জওয়ান তার হামলায় শহীদ হয়েছেন। মহারাষ্ট্র-ছত্তিশগড় সীমান্তে সে বহু বছর ধরে মাওবাদী ফ্রন্ট সামলেছে এবং গ্রামীণ এলাকায় সন্ত্রাস ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল।
ভূপতির আত্মসমর্পণের পিছনে দুটি বড় কারণ বলা হচ্ছে-
২. সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ: ভূপতি এখন হিংসার পথ ছেড়ে শান্তি আলোচনার কথা বলছিল, কিন্তু তার কথা সংগঠন প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে ভেতরে ভেতরে বিরোধিতা এবং ভাঙনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশেষে সে তার সঙ্গীদের বলে- "এখন আত্মসমর্পণই একমাত্র পথ বাকি আছে।"
হ্যাঁ। এপ্রিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সমস্ত আন্ডারগ্রাউন্ড নকশালদের অস্ত্র ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শাহ পরিষ্কার বলেছিলেন- “৩১ মার্চ ২০২৬-এর আগে আমরা ভারতকে নকশালবাদ থেকে মুক্ত করব।” ভূপতি এই আহ্বানের পরেই আত্মসমর্পণ করার মনস্থির করে। অনেক সূত্রের মতে, শাহের এই নীতি মাওবাদী এলাকায় একটি বড় মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছে।
গড়চিরোলির মতো এলাকা, যেখানে একসময় মাওবাদীদের রাজত্ব ছিল, সেখানে এখন উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের ঢেউ বইছে। ভূপতির স্ত্রী বিমলা চন্দ্র সিদাম ওরফে তারকাও এক বছর আগে আত্মসমর্পণ করেছে। এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে মাওবাদী মতাদর্শ এখন শেষ হয়ে আসছে এবং জঙ্গলে বন্দুকের জায়গায় এখন স্কুল, রাস্তা এবং কর্মসংস্থানের কথা হচ্ছে। ভূপতির আত্মসমর্পণ শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি মতাদর্শের পতনের প্রতীক। সেই ভূপতি, যে একদিন 'লাল বিপ্লব'-এর স্বপ্ন দেখেছিল, সে এখন 'শান্তি'-র পথে ফিরে এসেছে।