উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি উঠেছে
এই নিয়ে চলছে রাজনৈতিক বিতর্ক
চাইলেই কী তৈরি করা যায় নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চ
কেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে ভারতে
উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। এই নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু, চাইলেই কী তৈরি করা যায় নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল? রাজ্যের পাশাপাশি কেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে ভারতে?
ভারত, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় গড়ে ওঠা একটি দেশ, অর্থাৎ শাসন ক্ষমতা ভাগ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে। ভারত কোনও দেশ নয়, বরং রাজ্যসমূহের সমষ্টি। সংবিধান অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য কোনও রাজ্য গঠন করতে পারে, কোনও রাজ্যের আকার বাড়াতে বা কমাতে এবং কোনও রাজ্যের সীমানা বা নাম পরিবর্তন করতে পারে। ১৯৪৯ সালে যখন ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, তখন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ৪ ধরণের স্থান অন্তর্বুক্ত করা হয়েছিল -
১. গভর্নর এবং আইনসভা দ্বারা পরিচালিত ব্রিটিশ ভারতের প্রাক্তন প্রদেশগুলি
২. রাজশাসিত প্রাক্তন রাজ্যগুলি
৩. চিফ কমিশনারদের শাসনে থাকা প্রদেশগুলি
৪. কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট গভর্নর দ্বারা পরিচালিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
১৯৫৬ সালে রাজ্যগুলি পুনর্গঠনের পর শেষ দুই বিভাগের স্থানগুলিকে একক বিভাগে এনে 'কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল' হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্য়া ছিল মাত্র ৬ টি -
১. আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
২. লক্ষদ্বীপ
৩. দিল্লি
৪. মণিপুর
৫. ত্রিপুরা
৬. হিমাচল প্রদেশ
এরপর থেকে ১৯৫৪ সালে ফরাসী দখল মুক্ত হওয়া পুদুচেরিক ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৬৩ সালে, একে আংশিক রাজ্য হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালে পর্তুগিজদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরে দমন ও দিউ এবং গোয়াকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে, গোয়াকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে, দাদরা, নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউকে একক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে, মণিপুর, ত্রিপুরা এবং হিমাচল প্রদেশকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। চণ্ডীগড়কে করা হয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। দিল্লি প্রথমে রাজ্য ছিল। ১৯৫৬-র পর দিল্লিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে আবার আংশিক রাজ্য হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। আর ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আসলে কী?
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ভারত সরকার কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করেন, যিনি এই এলাকাগুলির প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, পুদুচেরি, জম্মু ও কাশ্মীর এবং দিল্লি আংশিক রাজ্য় হওার কারণে নির্বাচিত আইনসভা এবং সরকার রয়েছে।
কেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রয়োজন পড়েছিল?
যে অঞ্চলগুলি স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার জন্য হতে খুব ছোট (অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে) এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে একিভূত হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে দুর্বল বা রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল, সেই এলাকাগুলিকেই ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিতত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।