দেশজোড়া রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝেই 'অমরাবতী প্রকল্প' থেকে সরে দাঁড়াল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তারা সরকারি ভাবে থেকে জানিয়ে দিয়েছে, স্থানীয় কৃষকদের জমির ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা না মেটার কারনেই তাঁরা বাধ্য হলেন অমরাবতি প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নিতে। উল্লেখ্য রাজ্যভাগের পরে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় যে তাঁরা গুন্টুর জেলায় আমরাবতী বলে একটি শহর তৈরি করে সেখান থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করবেন। সেই মোতাবেক বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। প্রকল্পের মাঝপথে জমিদাতারা অভিযোগ করেন তাঁদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। সেই সংক্রান্ত অভিযোগের যথাযত বিহিত না হওয়াতেই আমরাবতী প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াল বিশ্বব্যাংক। যার ফলে গোটা প্রকল্পটিই অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাঙ্কের তরফ থেকে খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁরা পৃথিবীর এমন কোনও প্রকল্পের অংশীদার হন না যেখানে স্থানীয়দের ন্যয্য দাবিদাওয়া গুলি বিবেচনা করা হয় না। তাঁরা আরও জানান যে ঋণ গ্রহীতাদের উচিত প্রকল্প শুরু করার আগে সমস্ত আইনি দিক, বিশেষ করে স্থানীয়দের জীবন জীবিকা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত দিক গুলি ভালো করে খতিয়ে দেখা।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তরফ থেকে আরও জানানো হয় যে তাঁরা চেয়েছিলেন নিজেরা স্বাধীন ভাবে স্থানীয় দের সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগের একটি তদন্ত করতে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে ভারত সরকার স্পষ্টতই না বলে দেয়। যার ফলে প্রকল্প থেকে সরে আসা ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও বিকল্প ছিল না বলে ব্যাঙ্কের বোর্ড অফ ডিরেক্টরের তরফ থেকে জানানো হয়।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিং শেষে বিশ্বব্যাঙ্ক সূত্রে জানানো হয় এর আগে দুইবার তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিলেন, যাতে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার যথেষ্ট পরিমাণ সময় পায় সমস্যাটি সমাধান করার জন্য। কিন্তু তার পরেও যখন পরিস্থিতির সামান্যতম উন্নতি ঘটেনি, তখন তাঁদের পক্ষে আর বিলম্ব করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয় ব্যাঙ্কের তরফ থেকে।
ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ২০১৭ সালে স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া জানিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ককে একটি চিঠি লেখে। সেটিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয় কিরকম ভাবে সামাজিক এবং পরিবেশ বিধির তোয়াক্কা না করেই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। তার পরেই নড়েচড়ে বসে ব্যাঙ্ক। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছে সেই অভিযোগ সংক্রান্ত জবাব তলব করলেও কোনও সদুত্তর মেলেনি। এর ফেলে স্থানীয় কৃষকদের দাবিই সঠিক বলে মান্যতা পায় বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাঙ্কটির কাছে। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও দুইবারই তাঁরা আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজেদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেন। কিন্তু কোনভাবেই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অবশেষে সরকারি ভাবে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। এর ফলে বলাই বাহুল্য আন্তর্জাতিক স্তরে মুখ পুড়ল ভারতের।