"হলিউড তারকার রহস্যমৃত্যু" - খবরের কাগজে এরকম হেডলাইন দেখতে আমরা খুব একটা অনভ্যস্ত নোই। বেশ কিছু দশক আগে হোক বা সম্প্রতি ,তারকাদের রহস্যমৃত্যু নিয়ে নানান তত্ব দর্শকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিছু তত্ব আছে যেগুলো একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না আবার কিছু কিছু তত্ব বেশ মুখরোচক।আবার কিছু তাত্ত্বিক আছেন যারা এমনভাবে তত্বকথা সাজান, যে মনে হয় যেন, তারাই প্রকৃতই সত্যান্বেষী তাই মৃত্যুর সত্য উদ্ঘাটনে এমন বদ্ধপরিকর।এইরকমই বেশ কিছু হলিউড তারকার রহস্যমৃত্যুর তত্বই এখন তুলে ধরবো আপনাদের সামনে
"হলিউড তারকার রহস্যমৃত্যু" - খবরের কাগজে এরকম হেডলাইন দেখতে আমরা খুব একটা অনভ্যস্ত নোই। বেশ কিছু দশক আগে হোক বা সম্প্রতি ,তারকাদের রহস্যমৃত্যু নিয়ে নানান তত্ব দর্শকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিছু তত্ব আছে যেগুলো একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না আবার কিছু কিছু তত্ব বেশ মুখরোচক।আবার কিছু তাত্ত্বিক আছেন যারা এমনভাবে তত্বকথা সাজান, যে মনে হয় যেন, তারাই প্রকৃতই সত্যান্বেষী তাই মৃত্যুর সত্য উদ্ঘাটনে এমন বদ্ধপরিকর।এইরকমই বেশ কিছু হলিউড তারকার রহস্যমৃত্যুর তত্বই এখন তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।
প্রিন্স
তালিকায় প্রথমেই যার কথা বলবো তিনি হলেন প্রিন্স, যাকে মানুষ কেবল তার সংগীত কৃতিত্বের জন্যই নয়, বরং তার করুণ পরিণতির জন্যও মনে রেখেছেন ।
২১ এপ্রিল, ২০১৬ সালে তার মৃত্যু হয়। তদন্তকারীরা প্রাথমিক তদন্তের পর জানান যে ড্রাগ ওভারডোজের কারণেই নাকি তার এমন পরিণতি হয়েছে । তবে তার মৃত্যুর পরেও তদন্ত চলেছিল প্রায় আরও দু বছর। দুই বছরের তদন্তের পর উঠে আসে যে তিনি নাকি ব্যথানাশক ভিকোডিন খেয়েছিলেন। যা তার শরীরে ঢুকে বিষাক্ত ফেন্টানাইল তৈরি করেছিল ।তবে সত্যান্বেষীরা তা মানতে নারাজ। তাদের মতে কোনো হত্যাকারীই নাকি ইচ্ছে করেই প্রিন্সকে দিয়েছিলেন এই বড়িগুলি খেতে।তার মৃত্যুর পিছনে আছে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র
ববি ক্রিস্তিনা ব্রাউন
প্রয়াত, কিংবদন্তি হুইটনি হিউস্টনের ছোট কন্যাটিকেও ২৬ শে জুলাই, ২০১৫এ আটলান্টা-এলাকার একটি ধর্মশালার বাথটাবে ডুবন্ত , সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। ঠিক কী ঘটেছিল তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি আজও। এক বছরেরও বেশি সময় পরে, ময়নাতদন্তের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। রিপোর্টে ছিল একাধিক ওষুধের মারাত্মক সংমিশ্রনের ফলে বিষক্রিয়া হয় তার শরীরে।তবে ময়নাতদন্তের চিকিৎসকরা আজও বলতে পারেননি যে এই মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনাজনিত।যদিও তার পরিবার ও তার ভক্তরা তার এই মৃত্যুর পিছনে তার প্রেমিককেই দায়ী করেছিলেন। তাদের স্পষ্ট দাবি ছিল যে এই মৃত্যুর সাথে ক্রিস্তিনা প্রেমিকের সরাসরি কোনো যোগ আছে
দলরুস ও রিওদ্রান
আইরিশ অল্ট-রক ব্যান্ড দ্য ক্র্যানবেরির প্রধান গায়িকা ৪৬ বছর বয়সে ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮ এ লন্ডনের একটি হোটেল রুমে অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান। সুত্রের খবর তিনি নাকি সেখানে গান রেকর্ডিং করছিলেন। তার ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন এই মৃত্যুর ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও এটিকে পুরোপুরি রহস্যমৃত্যু বলে আখ্যাও দিতে পারছেন না তারা। মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ সম্পর্কে কর্নার কোনোকিছু সঠিকভাবে বলতেন না পারলেও সত্যান্বেষীদের ধারণা এই মৃত্যর পিছনে আছে এক গভীর ষড়যন্ত্র।
টুপাক শাকুর
হিপ-হপ তারকা টুপাক শাকুর লাস ভেগাসের একটি নামকরা ক্লাব গিগের দিকে যাচ্ছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর রাত্রে । যাচ্ছিলেন নিজের গাড়িতেই। কিন্তু ড্রাইভ-বাই শ্যুটিংয়ে হঠাৎ তাকে লক্ষ্য করে চার বার গুলি চালানো হয় । চারটে গুলিই লাগে তার শরীরে।ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ রাতে প্রকাশ্যে হিপহপ তারকার উপর গুলি চলা নিয়ে সেইসময় জল্পনাও হয়েছিল অনেক ।গুলিবিদ্ধ তারকাকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। অবশেষে ছয় দিন পর, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, মারা যান তিনি ।মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ২৫।বিশ্লেষকদের দাবি তিনি কোনোভাবে আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার কারণে তাকে চলে যেতে হলো এতো তাড়াতাড়ি।
ক্রিষ্টোফার ওয়ালস
শাকুর হত্যার মাত্র ছয় মাস পরই , আরেক তারকা র্যাপার ওয়ালেস, ৯ মার্চ, ১৯৯৭-এ লস অ্যাঞ্জেলেসে ড্রাইভ-বাই শ্যুটিংয়ে একইরকম ভাবে গুলিবিদ্ধ হন। শোনা যায় একটি পার্টি থেকে বেরোনোর পরই ড্রাইভ বাই শ্যুটিংয়ে যান তিনি। তারপর তাকে লক্ষ্য করেও গুলি চলে একাধিকবার। গুলি চলার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই মারা যান তিনি। তার বয়স ছিল ২৪।তার এই অমীমাংসিত হত্যাকান্ড নিয়ে পরবর্তীকালে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। যেখানে বলা হয় মাফিয়াদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত শত্রুতায় তার এই করুন পরিণতি।
নাতালিয়া উড
ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটালিনা দ্বীপের উপকূলে নাতালিয়া উড ডুবে যাওয়ার ছত্রিশ বছর পর, লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টি শেরিফের বিভাগ থেকে তার এই রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত পুনরায় চালু করেছে।অভিযোগের তীর যায় যদিও তার তৎকালীন স্বামী, রবার্ট ওয়াগনারের দিকে। কিন্তু সূত্রের খবর মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ২৯ সে নভেম্বর, ১৯৮১ তে এই অস্কার-মনোনীত অভিনেত্রী অন্ধকার ইয়ট থেকে অদৃশ্য হয়ে যান।কয়েক ঘন্টা পর, তার মৃতদেহ পাওয়া যায়, ইয়ট থেকে প্রায় এক মাইল দূরে। তার দেহটি প্রশান্ত মহাসাগরে ভাসছিল।মারা যাবার সময় তিনি পড়েছিলেন একটি নাইটগাউন, লাল জ্যাকেট এবং নীল মোজা।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয় জলে ডুবেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু লস এঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ বিভাগ ২০১১ সালে মামলাটি পুনরায় চালু করে; পরের বছর, তার মৃত্যুর শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে আরো অনেক কিছুই উল্ল্যেখ করা হয়। তবে তার মৃত্যু যে একটি পরিকল্পিত খুন তা অনেক বিশ্লেষকরাই এখনো দাবি করেন।
মেরিলিন মনরো
হলিউডের সবচেয়ে প্রাণবন্ত তারকা মেরিলিন মনরো মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হঠাৎ মারা যান। ১৯৭২ সালের ৫ ই আগস্ট, তার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে বিছানাতাই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে বলা হয় ড্রাগ ওভারডোজের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।তবে এটিকে অনেকেই আত্মহত্যার তকমা দিয়েছিলেন সেই সময় । বেশি পরিমান ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে তিনি কোমায় চলে যান। তবে ওভারডোজের বিষয়টি তার অনেক ভক্তই মানতে নারাজ। তাদের স্পষ্ট দাবি এ মৃত্যুর সাথে জড়িত আছে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র।প্রসঙ্গত উল্ল্যেযোগ্য রাষ্ট্রপতি কেনেডি এবং তার ভাই রবার্ট কেনেডি, উভয়ের সাথেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন নায়িকা। তাই কেনেডি পরিবারের পারিবারিক কেচ্ছা থেকে দায়মুক্ত হতেই নাকি সুকৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেরিলিন মনরোকে।
বব ক্রেন
টিভি কমেডি হোগানস হিরোসের তারকা বব ক্রেনকে তার ফিনিক্স-এলাকার অ্যাপার্টমেন্টে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ৪৯ বছর বয়েসী এই তারকার মৃতদেহের গলায় পাওয়া গেছিলো বৈদ্যুতিক তারের ক্ষত। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল যে পর্নোগ্রাফি শুট করার সময় ক্যামেরার ট্রাইপড দিয়ে পিটিয়ে নাকি তাকে হত্যা করা হয়। তাদেড় সন্দেহ ছিল যে ক্রেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জন কার্পেন্টার এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রমাণের অভাবে পুলিশ তাকে সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারেননি । ক্রেনের বড় ছেলে রবার্ট ক্রেন তার বাবার রহস্যমৃত্যু নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন।
ডেভিড ক্যারাডাইন
অভিনেতা এবং মার্শাল আর্টিস্ট ডেভিড ক্যারাডাইনকে নগ্ন অবস্থায় ব্যাংককের এক হোটেল রুমে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল থাই পুলিশ। কর্তৃপক্ষ সরাসরি বিষয়টি জানায় বিবিসিকে। তবে ক্যারাডাইনের ম্যানেজার জানায় , ৭২ বছর বয়সী এই অভিনেতা থাইল্যান্ডে তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র, স্ট্রেচ-এর শুটিংয়ের জন্য গেছিলেন ।হলিউড রিপোর্ট অনুসারে, পুলিশ কর্তৃক যে ময়নাতদন্ত হয় , তাতে পাওয়া যায় যে ক্যারাডিন শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন। তবে অনেকেই এই মৃত্যুকে আত্মহত্যার তকমা দিতে নারাজ।
তার স্ত্রী ২০১১ সালে, স্ট্রেচ ছবিটির পিছনে থাকা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন, দাবি করেন ক্যারাডাইনের এক সহকারীও নাকি জড়িত এই হত্যালীলায়।পারিবারিক সূত্রে খবর ক্যারাডাইনকে সেদিন ব্যাংকক শহরে নেভিগেট করতে সাহায্য করার কথা ছিল তারই এক সহকারীর। কিন্তু পুলিশ ক্যারাডিনের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আগের রাত থেকেই নাকি তার এই সহকারীটি পলাতক।
এলিজাবেথ শট
মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক হত্যালীলার মধ্যে একটি হলো ২২-বছর-বয়সী এলিজাবেথ শটের হত্যাকান্ড। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি খালি জায়গায় নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাকে। কোমর থেকে কাটা ছিল দেহটি । তার মুখ ও কানও কাটা ছিল। তদন্তকারীরা পরে প্রমাণ পেয়েছিলেন যে তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে।তারপরই তাকে এমন ভয়ঙ্কর ভাবে হত্যা করা হয়। কেউ কেউ আবার বলেছিলেন এইসবই নাকি তার উচাকাঙ্খার পরিণতি। তার এই ভয়ঙ্কর মৃত্যকে : "ব্ল্যাক ডাহলিয়া " বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে হলিউডে ।এরপর কেটে গেছে ছ টি দশক। কিন্তু ছয় দশক পরেও তার এই হত্যাকাণ্ডের সমাধান হয়নি আজও
জ্যাক ন্যান্স
অভিনেতা, কাল্ট ফেভারিট ইরেজারহেড এবং টুইন পিকসের তারকা জ্যাক ন্যান্স ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে ক্যালিফোর্নিয়ার সাউথ প্যাসাডেনাতে একটি কফি শপে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেছিলেন ।পরেরদিন , চিত্রনাট্যকার লিও বুলগারিনি, ন্যান্সের অ্যাপার্টমেন্টের মেঝে থেকে তাকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান। পরে ময়নাতদন্ত করে জানা যায় যে, ন্যান্স তার মাথায় ভোঁতা-বলের আঘাত পেয়েছিলেন। যার পরিণতিস্বরূপ তাকে হারাতে হলো প্রাণ। মৃত্যুর আগের দিন একটি ডোনাটের দোকানে দু'জনের সাথে মারামারি করেছিলেন তিনি। যারফলে মাথায় আঘাতও লেগেছিলো তার ।তবে তার হঠাৎ করে চলে যাওয়াটাকে অনেকেই খুব একটা স্বাভাবিক মনে করছেন না। তার মারা যাবার সাথে অনেকেই প্রেতত্বত্তের সরাসরি যোগ আছে বলে মনে করছেন।
উইলিয়াম ডেসমন্ড টেলর
ইতিহাস অনুসারে, উইলিয়াম ডেসমন্ড টেলর কয়েক ডজন নীরব চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের একজন তরুণ তারকা মেরি মাইলস মিন্টারের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।পুলিশ ৪৯ বছর বয়সী এই পরিচালককে লস অ্যাঞ্জেলেসের তার বাংলোর বসার ঘরের মেঝেতে মৃত অবস্থায় পায়। তার মৃত্যুর পর, নির্বাক চলচ্চিত্রের তরুণ তারকা মেরি মাইলস মিন্টারের লেখা একটি প্রেমের নোটও পাওয়া যায় টেলরের বাড়ি থেকে । মিন্টার পরে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি এবং তার মা শার্লট শেলবি টেলরের হত্যার রাতে তার বাড়িতেই উপস্থিত ছিলেন। টেলরের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকটি দিয়ে মিন্টারও এর আগে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে কি মেরি মাইলস মিন্টার সরাসরি যুক্ত টেলর হত্যাকাণ্ডে ? এই রহস্য এখনো অমীমাংসিত।