২০২১ সালের লোই ইনস্টিটিউট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্স (Lowy Institute Asia Power Index 2021) অনুযায়ী ক্রমে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শক্তি। সুপার পাওয়ার হল শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) ও চিন (China)।
২০২১ সালের লোই ইনস্টিটিউট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্স (Lowy Institute Asia Power Index 2021) অনুযায়ী ক্রমে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শক্তি - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) ও চিন (China)। ২০১৮ সাল থেকে এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (Asia-Pacific Region) রাষ্ট্রগুলির সম্পদ এবং প্রভাব পরিমাপ করে এই আপেক্ষিক ক্ষমতার ক্রমতালিকা প্রকাশ করে লোই ইনস্টিটিউট। এতে একদিকে যেমন বর্তমান শক্তির বন্টন ধরা পড়ে, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনগুলিও ধরা যায়। আর এই ইনডেক্স ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্রমশ এই অঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে উঠছে দ্বিমেরুত্ব।
এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সে মোট আটটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে নম্বর দেওয়া হয়। ১০০র মধ্যে যে দেশগুলির স্কোর ৭০-এর উপর থাকে, তাদের সুপার পাওয়ার বলে বিবেচনা করা হয়। আর তার থেকে নিচে এবং ১০ এর উপরে যাদের স্কোর, তাদের ধরা হয় মিডল পাওয়ার হিসাবে। তার নিচে যারা, তারা মাইনর। এবারের ইনডেক্স অনুযায়ী এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুটিই সুপার পাওয়ার রয়েছে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States of America) এবং চিন (China)। সামগ্রিকভাবে ৮২.২ পয়েন্ট স্কোর করেছে আমেরিকা, গত বারের থেকে ০.৬ শতাংশ বেশি। আর গতবারের থেকে ১.৫ পয়েন্ট কম স্কোর করলেও, চিন পেয়েছে ৭৪.৬ পয়েন্ট।
আর্থিক সক্ষমতা, ভবিষ্যত সম্পদের পরিমাপ, কূটনৈতিক প্রভাব - এর মতো ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। অন্যদিকে, সামরিক সক্ষমতা, স্থিতিস্থাপকতা, প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক, সাংস্কৃতিক প্রভাবের মতো বিষয়গুলিতে চিনের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা। আবার, সেরকমভাবেই, অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন ডিসি-কে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছে বেজিং।
সামগ্রিকভাবে প্রভাবের ক্ষেত্রে এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্স অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পরেই রয়েছে জাপান (Japan), অবশ্য তারা রয়েছে অনেকটাই পিছনে, স্কোর করেছে ৩৮.৭। গায়ে-গায়েই রয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা ভারত (India) (স্কোর ৩৭.৭) এবং রাশিয়া (Russia) (স্কোর ৩৩)। জাপানের স্কোর গত বছরের তুলনায় কমেছে ২.৪ পয়েন্ট, ভারতের ২ এবং রাশিয়ার ০.৫ পয়েন্ট। বস্তুত, এই তিন দেশ-সহ এই অঞ্চলের মোট আঠারোটি দেশেরই সামগ্রিক স্কোর গত বছরের তুলনায় নিম্নমুখী হয়েছে। আর এর সবথেকে বড় কারণ অর্থনীতিতে কোভিড মহামারির ধাক্কা। ভারত-সহ অনেক উন্নয়নশীল অর্থনীতিই তাদের প্রাক-কোভিড বৃদ্ধির পথ থেকে দারুণভাবে চ্যুত হয়েছে। যা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলির শক্তি পার্থক্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ছিল নিম্নমুখী। সেই প্রবণতাকে হারিয়ে তারা এবার ০.৬ পয়েন্ট লাভ করেছে। চিনের থেকে স্কোরে অনেক এগিয়ে থাকলেও, অর্থনৈতিক প্রভাবের ক্ষতির কারণে বাকি ইনডেক্সের লাভগুলি আটকে গিয়েছে। তবে, এই প্রথমবারের মতো চিনের ব্যাপক শক্তির পতন ঘটেছে। মহামারির আগে পরের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে ২০৩০ সালে শুধুমাত্র তাইওয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির বড় লাভ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। জাপান, চিনও খুব পিছিয়ে নেই।
তবে মনে করা হচ্ছে, কোভিড-১৯মহামারির প্রভাব থেকে যে দেশ যত দ্রুত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে, আগামী দশকে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যের চাবিকাঠি তার হাতেই থাকবে। এশিয় পাওযার ইনডেক্স অনুযায়ী ভারতের নেগেটিভ পাওয়ার গ্যাপ স্কোর অনেক বেশি। অর্থাৎ, ভারতের হাতে সংস্থান অনেক থাকলেও, সেই অনুযায়ী প্রত্যাশার কম প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে দেশ। কাজেই ভারতের হাতে সুযোগ রয়েছে, সেই সংস্থানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও বড় শক্তি হিসাবে তুলে ধরার। জাপানে কিন্তু কোভিড টিকাকরণের গতি ভারতের থেকে অনেক শ্লথ।