
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শনিবার দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আওয়ামি লিগ অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ করেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে যে জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
"পরামর্শদাতা কাউন্সিলের সভায় দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" বাংলাদেশ সরকার এমনই বিবৃতি দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামি-সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন ঘেরাও করে আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরব হয়েছে জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনগুলিও। রাজনৈতিক বিক্ষোভেও সামিল হয়েছে তারা। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বিক্ষোভে হাজির ছিল পরিচিত জঙ্গিরা। হাজির ছিল দুই জঙ্গি নেতা— আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-র প্রধান জসীমউদ্দিন রহমানি এবং লস্কর–ই–তৈবার বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক হারুন ইজ়হার, বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলিকে এক মঞ্চে আনার জন্য গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন যিনি।
গোয়েন্দারা জানিয়েছে আওয়মি লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ থেকে উড়েছে আইএস জঙ্গিদের পাতাকা। যা হাসিনার পতনের সময়ও উড়তে দেখা গেছে।
আওয়ামি লিগের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, 'অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারের আওয়ামি লিগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণায় বাংলাদেশের জনগণ হতবাক ও ক্ষুব্ধ'। সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিত করা হবে বলেও দলের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে
একই সঙ্গে, আমরা দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি যে ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ সঠিকভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে। আওয়ামি লিগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই দল আওয়ামি লিগের কর্মকাণ্ড স্বাধীন দেশে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত জনগণের নয় বলেও দাবি করা হয়েছে লিগের পক্ষ থেকে।
সরকার বাংলাদেশের মাটিকে স্বাধীনতাবিরোধী দুষ্ট শক্তি এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর জন্য উর্বর ভূমিতে পরিণত করতে চায় বলেও দাবি করা হয়েছে লিগের বিবৃতিতে। আরও বলা হয়েছে, "বাঙালার মাটিতে আওয়ামি লিগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার অর্থ হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ এবং মৌলিক বিষয়গুলিকে নির্মূল করা এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের নগ্ন আগ্রাসনকে উন্মুক্ত করে দেওয়া"।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামি লিগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বর্তমানে নির্বাসনে আছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
প্রায় সকল আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মী বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। যদিও দলের প্রবীণ নেতা, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নজরদারিতে আছেন, তিনি বৃহস্পতিবার ভোরে তার স্ত্রী ও শ্যালকসহ ব্যাংককে উড়ে যান।