
Sheikh Hasina charged with crimes against humanity: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র বিক্ষোভ (July Revolution) দমনে সহিংসতার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। এক মাস ব্যাপী তদন্তের পর শনিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) এই অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারান হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ ছাড়তেও বাধ্য হন। এখন নয়াদিল্লিতে কোনও অজ্ঞাত স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা সংস্কার, কোটা বিলোপ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং মিত্র গোষ্ঠীগুলিকে সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। তবে তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে কি না, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।
প্রধান অভিযোগকারী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেছেন, ‘আন্দোলন দমনে হিংসাত্মক মনোভাব স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। বরং হাসিনার নেতৃত্বে একটি সমন্বিত, ব্যাপক এবং পরিকল্পিত আক্রমণ ছিল। এই হত্যাকাণ্ডগুলি দুর্ঘটনাজনিত ছিল না। এগুলি পরিকল্পিত ছিল। অভিযুক্ত বিক্ষোভ দমনের জন্য সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং তাঁর সশস্ত্র দলীয় সদস্যদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন।’ প্রমাণ হিসেবে এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ, ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য ডিজিটাল রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়েছে যা অবৈধ শক্তি ব্যবহার করে ভিন্নমত দমনের স্পষ্ট উদ্দেশ্য প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল ৮১ জন ব্যক্তিকে মামলায় সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন (BTV) জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি বিচারের কার্যক্রম সম্প্রচার করছে। যা এ ধরনের একটি হাই-প্রোফাইল বিচারে আইনি স্বচ্ছতার একটি বিরল মুহূর্ত। হাসিনার পাশাপাশি তাঁর প্রশাসনের দু'জন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও সহ-অভিযুক্ত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অস্থিরতার সময় প্ররোচনা, ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা, সহায়তা এবং গণহত্যা রোধে ব্যর্থতার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিক্ষোভের মামলাটিই ক্ষমতাচ্যুত নেত্রীর মুখোমুখি হওয়া একমাত্র আইনি চ্যালেঞ্জ নয়। একই ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দু'টি মামলা চলছে। একটি মামলায় তাঁর দল ক্ষমতায় থাকাকালীন গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। অন্যটি ২০১৩ সালে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত ঘাতক দমন অভিযান সম্পর্কিত। হাসিনা যদি এই অভিযোগগুলিতে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে ট্রাইব্যুনালের রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূখণ্ডের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জন্য একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানকে জবাবদিহি করার একটি বিরল প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয় এই অভিযোগগুলি। বিচার চলাকালীন আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং গণতন্ত্রের বৃহত্তর প্রভাবের দিকে লক্ষ্য রাখছে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।