চিন যখন তালিবান, দীর্ঘ ষড়যন্ত্রে ধ্বংস হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির

দীর্ঘদিন ধরেই সংখ্যালঘু অত্যাচারের দুর্নাম রয়েছে চিন সরকারের

উইঘুর মুসলিমদের পর এবার তাদের নিশানায় বৌদ্ধরা

সম্প্রতি একটি সুপ্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির তারা ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ

এই ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ১৫ বছর আগে

amartya lahiri | Published : Sep 21, 2020 5:00 PM IST / Updated: Sep 21 2020, 10:31 PM IST

সংখ্যালঘু নাগরিকদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে দেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নাম রয়েছে চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি)। এতদিন শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া মসজিদ গুঁড়িয়ে সেখানে শৌচাগার বানানোর মতো ঘটনার কথা শোনা গিয়েছিল। এবার সর্বশেষতম ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনায় চিন সরকার শানসি প্রদেশে একটি এক হাজার বছরের পুরানো বৌদ্ধ মন্দির ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এর ধ্বংসের পরিকল্পনা অন্তত ১৫ বছর আগেই করা হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।

উজিন পর্বতমালার উপরে তাইউন বিমানবন্দর থেকে ৮.৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এক নির্জন স্থানে ফুয়ুন নামে একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল বলে জানা গিয়েছে। শানসি প্রদেশের এই বৌদ্ধ মন্দিরটি চিন এবং তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিল। ফলে, চিনা কমিউনিস্ট পার্টি সরকারের সেভাবে এই জনগনকে প্রভাবিত করতে পারছিল না। তাই মন্দিরটি তাদের চক্ষুশূলহয়ে দাঁড়ায়। এরপরই হয়েছিল মন্দির ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ১৫ বছর আগে সংস্কারের অজুহাতে এই বৌদ্ধ মন্দিরে প্রবেশ করেছিল সিসিপি। সংস্কারের চুক্তির প্রস্তাবে ভালো মনেই স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। ২০০৬ সালে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রায় তিন-চার বছর সময় নিয়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজ এগোয়। আর সংস্কারের নামে গর্ভগৃহের প্রস্থের আকার ৪০ মিটার থেকে ৩০ মিটারে কমিয়ে ফেলা হয়। চারটি বৃহৎ ভবন নিয়ে গঠিত বিহারটিকে ভেঙে নতুন একটি ছোট ভবন তৈরি করা হয়। প্রার্থনা ঘরগুলি রূপান্তরিত করা হয় গ্রন্থাগার এবং যাদুঘরে। নতুন গার্ড পোস্ট এবং আবাসন তৈরি করা হয়, যেখানে চিনা পিএলএ-র সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল। আর শেষ ছোঁয়া হিসাবে মন্দিরটির নতুন একটি চিনা নাম দেওয়া হয়েছিল। ফলে, মঠের সমস্ত ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের উপর তখন থেকেই সিসিপি-র নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়েছিল।

তবে, গত ২৪ জুলাই থেকে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে মন্দিরটি একেবারে ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পিএলএর-ই অংশ, পিপলস আর্মড পুলিশ ২১ জুলাই বুলডোজার এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে ফুয়ুন মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সন্ন্যাসীদের এবং মন্দিরের অন্যান্য কর্মীদের অবিলম্বে চত্বরটি ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কোনও কারণ না দেখিয়েই মন্দিরমুখি দুটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ জুলাইয়ের পর থেকে মন্দির ধ্বংসের কাজ শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাচীন মন্দিরটি পরিণত হয় ধ্বংসাবশেষে। ঠিক কেন এই মন্দিরটি আচমকা ভেঙে ফেলল চিন সরকার, সেই উত্তর এখনও অজানা।

 

Share this article
click me!