বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এতদিন একের পর এক সমালোচনা আসছিল ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। এবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৫৪ জন সদস্য় এই আইনকে "বিশ্বে রাষ্ট্রহীনতার পক্ষে সবচেয়ে বড় সঙ্কট ও মানুষের দুর্দশার কারণ" বলে আখ্য়া দিল। তারপর শুধু সেখানেই থেমে থাকল না, রীতিমতো একটি প্রস্তাব তৈরি করে ফেলল। যা আগামী সপ্তাহে ব্রাসেলসে পার্লামেন্টের অধিবেশনে পেশ হবে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে যে, "ভারতের এই নতুন আইন সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডাকে তুলে ধরে অত্য়ন্ত বিপজ্জনক একটি নজির তৈরি করেছে। এই আইনের নেচার বা প্রকৃতিই হল বিভাজনকামী, কারণ এতে অন্য় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির যে অধিকার তার থেকে মুসলিমদের বিভেদ ঘটানো হচ্ছে।"
সূত্রের খবর, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৬ টি দেশের সদস্য়দের নিয়ে গঠিত প্রগতিশীল এস অ্য়ান্ড ডি গোষ্ঠী এই প্রস্তাবের নেপথ্য়ে রয়েছে। প্রস্তাবে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, "মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা আর সব ধরনের জাতি বৈষম্য় দূর করার লক্ষ্য়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতার পরিপন্থী।" রাষ্ট্রপুঞ্জ রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে নিপীড়িত আখ্য়া দিলেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে তাদের কেন বাদ রাখা হল, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ভারতে বসবাসকারী তামিল উদ্বাস্তু, পাকিস্তানের আহমেদি ও হাজারা, বাংলাদেশের বিহারি মুসলিমদের প্রতিও এই আইন বৈষম্য়মূলক বলে মনে করছে প্রস্তাবটি।
এস অ্য়ান্ড টি গোষ্ঠীর প্রস্তাবে ভারতে দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী প্রতিবাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই বিক্ষোভের জেরে ভারতে এখনও পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে, আহতের সংখ্য়া ১৭৫ জন। গ্রেফতার হয়েছেন অসংখ্য় মানুষ। এমনকি প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়েছে, দেশজোড়া প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে, কার্ফু জারি করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে পুলিশি নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে ভারতকে রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষিত নীতি মেনে চলতে বলেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য়রা।