বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হওয়া স্পেশাল অপারেশন ফোর্স যেভাবে হামলা চালায়, তা বেশ জটিল ছিল। কারণ ওই বাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাড়িতে মহিলা এবং একাধিক শিশুর উপস্থিতি ছিল।
বড়সড় সাফল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সিরিয়ায় (Syria) একটি বিস্ফোরণে নিহত ইসলামিক স্টেট (Islamic State) প্রধান আবু ইব্রাহিম অল-হাশিমি অল-কুরেশি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) দাবি করেছেন সেনা বাহিনীর গোপন অভিযানেই ‘খতম’ হয়েছেন আইএস প্রধান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, সেনাবাহিনী উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় একটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়। জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দার বিরুদ্ধে মূলত এই অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে নিহত হন আইএস প্রধান।
তবে এই খবর সবার জানা থাকলেও, কীভাবে কষা হয়েছিল সেই ছক। কীভাবে নিখুঁত প্ল্যানিংয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল কুরেশির বাড়ি, তার ব্লুপ্রিন্ট তৈরির সময় উপস্থিত ছিলেন খোদ বাইডেন। এমনকী অপারেশন চলাকালীন ওয়াররুমেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়ায় আমেরিকার অভিযানের সময় আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হন। তার পরই নেতৃত্বে আসেন ইব্রাহিম অল-হাশিমি।
সিরিয়ার উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, লড়াই শুরুর পর একটি বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণের অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছ’জন শিশু ও চার নারী রয়েছেন। পরে জানা যায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আইএস প্রধান আবু ইব্রাহিম অল-হাশিমিন অল-কুরেশি ও তাঁর স্ত্রী এবং শিশুরা।
প্ল্যানিংয়ের শুরুর কথা
ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে মার্কিন গোয়েন্দারা নিশ্চিত তথ্য পান যে উত্তর সিরিয়ার আতমে-তে একটি বাড়ির ওপরের তলা দখল করে যিনি রয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, ইসলামিক স্টেট গ্রুপের প্রধান। এরপরেই শুরু হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতা। হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে, ওই বাড়ির একটি টেবিল-টপ মডেল স্থাপন করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি টার্গেট আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাশিকে খতম করার প্ল্যানিং সম্পর্কে জানানো হয়।
'অবিশ্বাস্যরকম জটিল' অপারেশন
তুর্কি সীমান্তের কাছে জলপাই গাছের জঙ্গলের মাঝখানে তৈরি করা তিন-স্তরের সিন্ডারব্লক বাড়িতে বসবাসকারী সাধারণ নাগরিকদেরও মৃত্যুর সম্ভাবনা কমাতে চেয়েছিল আমেরিকা। ফলে বেঠে নিতে হয়ছিল অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ পথ। এই রুটেই হামলা চালাতে সম্মতি দেন বাইডেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হওয়া স্পেশাল অপারেশন ফোর্স যেভাবে হামলা চালায়, তা বেশ জটিল ছিল। কারণ ওই বাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাড়িতে মহিলা এবং একাধিক শিশুর উপস্থিতি ছিল। শেষ পর্যন্ত, মার্কিন সেনা ঘরটি ঘিরে ফেললে ভিতরের সকলকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাতে থাকে। ঠিক সেই সময় কুরেশি, তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ নিজেকে উড়িয়ে দেয়। তবে এমন একটা রেজাল্ট হয় আশা করেছিল আমেরিকা।
'আঙ্গুলের ছাপ এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ নিশ্চিত হয়েছে'
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জির মতে, বিস্ফোরণটির ফলে কুরেশি সহ বিল্ডিং থেকে একাধিক লোককে বাইরে মাটিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এই বিষয়ে পেন্টাগনের নাম উল্লেখ করে ম্যাকেঞ্জি বলেন, "আঙ্গুলের ছাপ এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে ওই ব্যক্তিই আইসিস প্রধান।"
অপারেশনটির জন্য একাধিকবার মহড়া দেওয়া হয়। আত্মসমর্পণ থেকে শুরু করে ফায়ারফাইট পর্যন্ত সবকিছুর জন্য বিশেষ বাহিনী প্রশিক্ষিত ছিল। মার্কিন বাহিনী বারবার হেলিকপ্টার অভিযানের মহড়া দেয়। তবে মার্কিন বাহিনী ওই বাড়ির কাছে পৌঁছানোর আগেই, আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরাইশি একটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুম থেকে অভিযান পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, কুরাইশির আত্মহত্যাকে "কাপুরুষতার চূড়ান্ত" বলে অভিহিত করেন।