শনিবার রাতে হঠাৎই ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় তেহরানের কারাগার থেকে। পাশাপাশি গুলি চলার শব্দও পাওয়া যায়। উত্তর তেহরানের ইভিন কারাগারে বন্দি রয়েছেন বহু বিদেশি, রাজনৈতিক বন্দিরাও। রয়েছেন হিজাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল বহু বিক্ষোভকারীও।
১৫ অক্টোবর, রাতের অন্ধকারকে ভেদ করল আগুনের লেলিহান শিখা। মাঝরাতে গুলির শব্দে কেঁপে উঠল তেহরান। হিজাব বিতর্কের আঁচই কি শনিবার মাঝরাতে জ্বলে উঠল ইরানের কারাগারে? একদিকে মাহসা মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল ইরান, তার মধ্যে ইরানের কারাগারে এই অগ্নিকাণ্ড ও সংঘর্ষে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইরানে।
মাহশা মৃত্যুর প্রতিবাদের মাঝেই গোলাগুলিতে কেঁপে উঠল তেহরানের ইভিন কারাগার।
শনিবার রাতে হঠাৎই ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় তেহরানের কারাগার থেকে। পাশাপাশি গুলি চলার শব্দও পাওয়া যায়। উত্তর তেহরানের ইভিন কারাগারে বন্দি রয়েছেন বহু বিদেশি, রাজনৈতিক বন্দিরাও। রয়েছেন হিজাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল বহু বিক্ষোভকারীও। এই কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও জটিল হয়ে উঠল সে দেশের পরিস্থিতি।
প্রসঙ্গত, ঠিকভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' ইরানের ২২ বছরের তরুণীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ইরানি পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সঙ্গে তেহরানে বেড়াতে এসেছিলেন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' নীতি পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন আমিনি। কয়েকজন স্থানীয় মহিলা আমিনির পথ আটকে হিজাব পরার জন্য বারবারই চাপ দিতে থাকে। রাজী না হওয়ায় বাড়তে থাকে বাগবিতন্ডা। ধীরে ধীরে তর্কাতর্কি ধস্তাধস্তির রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরানি পুলিশ। হিসাব নেই দেখে তরুণীকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমিনিকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলার পর পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনির পরিবার জানতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোমায় চলে যান তরুণী। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ২২ বছরের আমিনি। পরিবারের অভিযোগ থানায় নিয়ে গিইয়ে বেধরক মারধর করা হয় আমিনিকে। হিজাব পরা শেখানোর নামে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মাথার খুলি। যদিও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ। তাঁদের দাবি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তরুণী এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে রাজী নন আমিনির পরিবার। \
এরপরই, রানের রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। 'অত্যাচার'-এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কাতারে কাতারে ইরানি মহিলা। প্রশাসনের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে গণবিক্ষোভের আগুন দেখা গিয়েছে ইরানের রাস্তায়। সেই আগুনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আমিনি হত্যার প্রতিবাদে প্রকাশ্য রাস্তায় হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভ উত্তেজিত জনতা। মুহুর্মুহু উঠছে সরকার বিরোধী স্লোগান। তেহেরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত করেছেন শয় শয় ইরানি তরুণী। ইরানের ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের আঁচ। সমবেত জনতার ওপর চাঠিচার্জ করে ইরানি পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া এমনকী চলছে গুলিও। আমিনি মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।