- Home
- World News
- International News
- 'অত্যাচারী নিপাত যাক' প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে ইরান, চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় পুড়ছে হিজাব
'অত্যাচারী নিপাত যাক' প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে ইরান, চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় পুড়ছে হিজাব
প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে ইরান। ২২ বছরের তরুণীর মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে ইরানের নারী সমাজ। রাস্তায় রাস্তায় পুড়ছে হিজাব, চুল কেটে চলছে প্রতিবাদ। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে, "অত্যাচারী নিপাত যাক"। গণ-আন্দোলনে কাঁপছে মধ্য-প্রাচ্যের এই দেশ। হিজাব ঠিক মতো না পরার 'অপরাধে'আটক করা হয়েছিল ২২ বছরের মাহসা আমিনিকে। তাঁকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যায় ইরানি নীতিপুলিশ। পুলিশ হেফাজতেই মৃত্যু হয় ২২ বছরের আমিনির। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পথে নামেন ইরানি মহিলারা। প্রকাশ্যে হিজাব খুলে, চুল কেটে চলে প্রতিবাদ। প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় আরও ৩১ জনের। পুলিশ হেফাজতে আমিনির অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ইরানে মেয়েদের 'পোশাক ফতোয়া' নিয়ে উঠে এসেছে একাধিক প্রশ্ন।
| Published : Sep 23 2022, 01:16 PM IST / Updated: Sep 23 2022, 02:01 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
পরিবারের সঙ্গে তেহরানে বেড়াতে এসেছিলেন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' নীতি পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন আমিনি। কয়েকজন স্থানীয় মহিলা আমিনির পথ আটকে হিজাব পরার জন্য বারবারই চাপ দিতে থাকে। রাজী না হওয়ায় বাড়তে থাকে বাগবিতন্ডা। ধীরে ধীরে তর্কাতর্কি ধস্তাধস্তির রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরানি পুলিশ। হিসাব নেই দেখে তরুণীকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আমিনিকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলার পর পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনির পরিবার জানতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোমায় চলে যান তরুণী। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ২২ বছরের আমিনি। পরিবারের অভিযোগ থানায় নিয়ে গিইয়ে বেধরক মারধর করা হয় আমিনিকে। হিজাব পরা শেখানোর নামে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মাথার খুলি। যদিও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ। তাঁদের দাবি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তরুণী এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে রাজী নন আমিনির পরিবার।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ফুঁসে ওঠে ইরানের নারী সমাজ। ইরানের রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। 'অত্যাচার'-এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কাতারে কাতারে ইরানি মহিলা। প্রশাসনের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে গণবিক্ষোভের আগুন দেখা গিয়েছে ইরানের রাস্তায়। সেই আগুনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আমিনি হত্যার প্রতিবাদে প্রকাশ্য রাস্তায় হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভ উত্তেজিত জনতা। মুহুর্মুহু উঠছে সরকার বিরোধী স্লোগান। তেহেরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত করেছেন শয় শয় ইরানি তরুণী। ইরানের ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের আঁচ। সমবেত জনতার ওপর চাঠিচার্জ করে ইরানি পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া এমনকী চলছে গুলিও। আমিনি মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
ইরান জুড়ে শোনা যাচ্ছে 'অত্যাচারী নিপাত যাক' স্লোগান। আমিনি মৃত্যুর ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। কার্যত চাপের মুখে পড়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাইসি সরকার। অন্যদিকে ২২ বছরের তরুনীর মৃত্যুতে গর্জে উঠেছে ইরানের নারী সমাজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে হিজাব পোড়ানোর, চুল কেটে ফেলার ভিডিও। ইতিমধ্যে প্রতিবাদ করতে নেমে নিহত ৩১ জন। পুলিশের বিরুদ্ধে সমবেত জনতার উপর লাঠি চার্জের অভিযোগ। প্রতিবাদের আগুন প্রথম জ্বলে উঠেছিল কুর্দিস্তান প্রদেশে। তারপর ইরানের ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। একদিকে যেমন নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের উপর চলছে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া, গুলি চালানো। অন্যদিকে প্রতিবাদের খবর ছড়িয়ে পড়া রুখতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। ইরানের মানবাধিকার সংগঠনের অধিকর্তা মেহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম জানিয়েছেন, 'ইরানের মানুষ নিজেদের মৌলিক অধিকার, সম্মানের জন্য পথে নেমেছেন। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে পুলিশ।'
ইরানের শরিয়া আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া রাস্তায় বেরোতে পারবে না মেয়েরা। সর্বদা ঢেকা রাখতে হবে মাথার চুল। পরনে লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক বাধ্যতামূলক। লম্বা চুল রাখতে হবে মেয়েদের। আইন ভাঙলে জরিমানা, গ্রেফতার এমনকী জেলও হতে পারে বলে নির্দেশ ইব্রাহিম রাইসির সরকার। আমিনির ঘটনার পর এই আইনের বিরুদ্ধে সরব ইরানের আমজনতা।
অথচ ইতিহাসের পাতা উলটে দেখলে দেখা যায় তিন দশক আগেও হিজাব নিয়ে এই কড়াকরি ছিল না ইরানে। শুধু তাই নয় ইরানের বুকে মহিলাদের জন্য ছিল একাধিক সেলুন। খোলা চুলে পছন্দের পোশাকে দিব্যি দেখা যাতায়াত করতে পারতেন মহিলারা। এমনকী সমুদ্র সৈকতে সাঁরারের পোশাকেও দেখা যেত ইরানি মহিলাদের।
শুধু তাই নয় শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল উৎকর্ষতা। ১৯৭৭ সালের আগেও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ইরানের মহিলারা। বাইরে থেকেও বহু মানুষ এমনকী গ্রামের রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরাও বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে আসছেন।
১৯৭৯ সালে পহলভি রাজবংশের বিরুদ্ধে রাজতন্ত্র-বিরোধী বিপ্লবের সাক্ষী হয় ইরান।পহলভি রাজবংশের শাসক শাহ মহম্মদ রেজা পহলভিকে গদিচ্যুত করে ইরানের শাসনভার যায় ইসলামিক রিপাবলিক সরকারের হাতে। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বেই ক্ষমতায় আসে এই সরকার। ক্ষমতার হাত বদলের পরই বদলাতে থাকে ইরানের সামাজীক ও রাজনৈতিক চিত্র। ক্ষমতায় আসার পরই আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সকল মহিলার হিজাব পরে রাস্তায় বেরোন বাধ্যতামূলক করেন।
আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির এই 'ফতোয়া'র বিরুদ্ধে সেই সময়ও গর্জে উঠেছিল ইরানের নারী সমাজ। ১৯৭৯ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবসের দিন হিজাব বিরোধী বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছিল গোটা দেশ। সমাজের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার মহিলা খোমেইনির নির্দেশের বিরোধীতায় পথে নেমেছিলেন।
শুধু মেয়েদের পোশাক নয়, আয়াতুল্লাহর জমানায় নতুন নিয়ম জারি হয় নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও। মহিলা ও পুরুষরা একই ঘরে নামাজ পড়তে পারবে না। মহিলা ও পুরুষদের প্রার্থনার জায়গা অনেকটা দূরে হতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় আয়াতুল্লাহ সরকার। ইরানি বিপ্লব পরবর্তী সময় ক্রমশ খারাপের দিকে গড়িয়েছে সে দেশের মহিলাদের অবস্থা। বেড়েছে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য এবং পাল্লা দিইয়ে কমেছে মহিলাদের সামাজিক অধিকার। ইরানের রাজবংশের পতনের পর থেকেই শুরু হয়েছিল মেয়েদের অধিকারের লড়াই। এই বিক্ষোপ কখনও থামেনি। তবে বিপ্লবের ফল হাতে আসেনি ইরানি মহিলাদের