
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তুলে ধরে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা সামনে এসেছে। কুখ্যাত পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (JeM) তাদের প্রথম মহিলা শাখা 'জামাত-উল-মোমিনাত' গঠনের ঘোষণা করেছে। জইশ প্রধান এবং রাষ্ট্রসংঘ-স্বীকৃত জঙ্গি মৌলানা মাসুদ আজহারের নামে জারি করা একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে, যা এই সংগঠনের কার্যকলাপে একটি বিপজ্জনক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ৮ অক্টোবর ২০২৫-এ পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের জইশের মারকাজ উসমান-ও-আলিতে নতুন ব্রিগেডের জন্য নিয়োগ শুরু হয়েছে।
জইশের প্রচার মাধ্যম আল-কালাম মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত চিঠি অনুসারে, এই মহিলা ব্রিগেড আনুষ্ঠানিকভাবে জামাত-উল-মোমিনাত নামে কাজ করবে। সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ব্রিগেডের নেতৃত্বে থাকবে মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়া আজহার। ৭ মে, ২০২৫-এ 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় ভারতীয় বাহিনী যখন মারকাজ সুবহানাল্লাহে জইশের সদর দফতরে হামলা চালায়, সে সময় সাদিয়ার স্বামী ইউসুফ আজহার নিহত হন।
দেওবন্দী-ভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ সশস্ত্র জিহাদ বা যুদ্ধ মিশনে মহিলাদের অংশগ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে, সূত্র বলছে যে পহেলগাম জঙ্গি হামলা এবং 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পর তাদের কৌশলে পরিবর্তন আসে। মাসুদ আজহার তার ভাই তালহা আল-সাইফের সঙ্গে মিলে জইশের কার্যক্রমে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন, যা এই বিশেষ মহিলা ব্রিগেডের পথ তৈরি করে।
নিয়োগ অভিযানে জইশ কমান্ডারদের স্ত্রীদের পাশাপাশি বাহাওয়ালপুর, করাচি, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, হরিপুর এবং মানসেহরায় জইশ-পরিচালিত কেন্দ্রগুলিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মহিলাদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, যদিও আইএসআইএস, বোকো হারাম, হামাস এবং এলটিটিই-এর মতো বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি ঐতিহাসিকভাবে মহিলাদের আত্মঘাতী হামলাকারী হিসাবে ব্যবহার করেছে, জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি মূলত এটি এড়িয়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা এখন বিশ্বাস করেন যে জইশের জামাত-উল-মোমিনাত তৈরি করা ভবিষ্যতের জঙ্গি অভিযানে মহিলা আত্মঘাতী বোমারুদের প্রশিক্ষণ ও মোতায়েন করার নতুন উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়, যা এই সংগঠনের কৌশলে একটি বিপজ্জনক বিবর্তন।
জইশের মহিলা ব্রিগেড গঠনের পাশাপাশি অন্যান্য পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ভারত-বিরোধী বক্তব্যও অব্যাহত রয়েছে। ৭ অক্টোবর, লস্কর-ই-তৈবার (LeT) ডেপুটি চিফ এবং পহেলগাম হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সইফুল্লাহ কাসুরি একটি বহুল প্রচারিত ভিডিওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রকাশ্য হুমকি দেয়।
ভিডিওতে কাসুরি পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের প্রশংসা করে তাকে 'ফিল্ড মার্শাল' বলে অভিহিত করে এবং তাকে '১০ মে, ২০২৫-এর মতো প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শিক্ষা দেওয়ার' জন্য অনুরোধ করে। সে 'বন্যাত্রাণের কাজের নামে' কাজ করার দাবি করে, এবং ভারতকে 'জল সন্ত্রাস' এবং পাকিস্তানে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যা সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করে।
কাসুরির হুমকির সময়টা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সহ, বিশ্ব মঞ্চে বারবার সিন্ধু জল চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেছে, কিন্তু নিজের মাটি থেকে সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদকে উপেক্ষা করে চলেছে।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই ঘটনাগুলির উপর কড়া নজর রাখবে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে জামাত-উল-মোমিনাতকে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা এবং নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী মিশন সহ বড় ধরনের হামলায় ব্যবহার করা হতে পারে।