
পহেলগাঁও হামলার এক সপ্তাহের অধিক পার হল। তা সত্ত্বেও এখনও অধরা জঙ্গিরা। ফলে প্রতিশোধ নিতে ভারত যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে বলে অনুমান সকলের। এই ভয়ে দিন কাটাচ্ছে পাকিস্তান।
সদ্য পাকিস্তানের অন্দরে এই আশঙ্কা এতটাই তীব্র হয়েছে যে নিরাপত্তা বাড়ানো হল লস্কর ই তৈবা এবং জামাত উদ দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদের। এক প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান সরকার ও আইএসআই যৌথ ভাবে হাফিজ সইদের নিরাপত্তার বিষয় নজর দিচ্ছে।
হাফিজ সইদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানার আগে জেনে নিন এই হাফিজ সইদ কে। ২০০৮ সালে মুম্বই জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড হলেন হাফিজ সইদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে আছে। কাশ্মীরে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়ে অশান্তি করার একাধিক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তিনি লস্কর ই তৈবা-র প্রতিষ্ঠানা। বর্তমানে ৭৭ বছর বয়স হাফিজ সইদের। ভারত ও আমেরিকা এই দুই দেশেরই ওয়ান্টেড তালিকা আছে হাফিজ সইদ। তা সত্ত্বেও সে পাকিস্তানের মাটিতে কেবল ঘুরে বেড়াচ্ছে শুধু নয়, সঙ্গে তার জন্য নিরাপত্তার বিষয় বন্দোবস্তও করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, লাহোরের মহল্লা জোহর এলাকার রয়েছে হাফিজ সইদের বাড়ি। সেখানই থাকে সে। এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পাক সাধারণ নাগরিক থাকেন। বেশ কয়টি মসজিদ ও মাদ্রাসা আছে। সেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যেই এই কুখ্যাত জঙ্গি হাফিজ সইদকে আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। বাড়িতেই হাফিজা সইদকে আটক থাকার কথা বলেছে পাকিস্তান। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে তাকে নানান সমাবেশে দেখা গিয়েছে। এমনকী জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাডেও হাফিজের যাতায়াত আছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, হাফিজ সইদের বাড়িতে সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং, নিরাপত্তারক্ষ্মীও মোতায়েন করা থাকে। গত কয়েক দিনে সেখানকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা কয়েক গুণ বেড়েছে। সেখানে পাকিস্তান স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্রুপ-র কমান্ডোদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে খবর। তার বাড়ির ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে চলছে বিশেষ নজরদারি। এই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোড়দার করার কারণ যে শুধুই ভারতের হামলার ভয় তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ছিল সেই ভয়ানক দিন। যেদিন জঙ্গিদের গুলিতে প্রয়াত হন ২৬ জন সাধারণ মানুষ। এরা সকলেই ছিলেন কাশ্মীরের পর্যটক। প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেছিলেন যে, জঙ্গিরা ধর্ম জেনে বেছে বেছে হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটে পেহলগাঁও-তে। পর্যটকদের রক্ত লাল হয়ে যায় মিনি সুইৎজারল্যান্ড।
এই পেহলগাঁও কাণ্ডে লস্কর ই তৈবা-র ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট দায়ি বলে অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে এখনও চলছে তদন্ত।সেনা সদস্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা করে চলেছেন তদন্ত। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে। তেমনই সন্দেহজনক কিছু দেখলে বোম্ব দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
জানা গিয়েছিল, এই হত্যার ছক দীর্ঘদিন ধরে করা হয়। ২২ এপ্রিল হামলার ঠিক আগে ১-৭ এপ্রিল রেইকি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। একাধিক রিসর্টে রেইকি করেছিল জঙ্গিরা। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছিল কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকা। যা মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত। ২২ এপ্রিল দুপুরে ৫-৬ জন জঙ্গি সেখানে হাজির হয়েছিল। দু-তিনটে দলে ভাগ হয়ে ৪০-৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ধর্মীয় পরিচয় দেখে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। তাতে মৃত্যু হয় ২৫ জন পর্যটক ও ১ জন স্থানীয়ের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনেকে। পরে তারা সুস্থ আছেন বলে জানা যায়।
এদিকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল শুধু হিন্দুদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে দাবি করেছিলেন যে, পুরুষদের প্যান্ট খুলতে বলা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু কিনা সে বিশ্বাস নিশ্চিত করার জন্য। পুরুষদের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল জঙ্গিরা। তারপর এই বিষয় নিশ্চিত করে গুলি করা হয়। পরে এই কথা সঠিক বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরাও। কারণ প্রায় ২০ জনের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেছিল, আর সে কারণে এই ঘটনা নিশ্চিত বলে দাবি করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।