তাঁর পার্সে ছিল ইউকে স্টুডেন্ট ভিসা। যা না-থাকলে তাঁর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে পড়াই কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। আর তা তিনি কিনা ভুলে ফেলে রেখে এলেন ট্যাক্সিতে। আর সেই ট্যাক্সিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়েছিলেন তিনি। তাই মিটার চালু হয়নি। খোঁজ পাওয়া যায়নি সেই ট্যাক্সির। তারপর?
দুবাইয়ের সেই ভারতীয় যুবতীর পার্স ফেরত দিয়ে গেলেন সেখানকার পাকিস্তানি ট্যাক্সিচালক। বলতে গেলে, একেবারে বাড়়ি বয়ে এসে। ঘটনায় মুগ্ধ যুবতীর পরিবার।
কেরালার মেয়ে ব়্য়াচেল রোজ ব্রিটেনের ল্য়াঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্য়ালয়ের একজন আইন পড়ুয়া। দুবাই থেকেই গ্য়াজুয়েশন করেছিলেন ব়োজ। সেখানে এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দিতে এসেছিলেন সম্প্রতি। জানুয়ারির ৪ তারিখে তিনি মোদাসার খাদিমের ট্য়াক্সিতে উঠেছিলেন। কিন্তু ওই ট্য়াক্সিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দেখতে তাঁর এক বন্ধু আরেকটি ট্য়াক্সিতে বসে রয়েছেন। তাই তড়িঘড়ি করে ট্য়াক্সি থেকে নেমে পড়েন। আর সেইসঙ্গে নিজের পার্সটি ফেলে আসেন মোদাসারের ট্য়াক্সিতে। ওই পার্সেই ছিল ব়োজের ইউকে স্টুডেন্ট ভিসা। সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৯ হাজার টাকা।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে কার্যত দিশাহীন হয়ে ম্য়াঞ্চেস্টার পাড়ি দেন ব়্যাচেল। ওঁর পরিবারের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে ওই ট্য়াক্সির নাম্বার প্লেট অস্পষ্ট দেখা যায়। আর যেহেতু ট্য়াক্সিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়েন ব়্যাচেল, তাই ড্রাইভারের খোঁজ পাওয়াও কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে সেখানকার রোড ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট বিপাকে পড়েন ওই যুবতী। কারণ, মার্কিন ভিসার কোনও প্রতিলিপি ওঁর কাছে ছিল না। অন্য়দিকে, ব্রিটেনে তাঁর বিশ্ববিদ্য়ালয় থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ব়োজকে আবার ভিসার জন্য় আবেদন করতে হবে। কান্নায় ভেঙে পড়েন আইনের ওই পড়ুয়া।
এদিকে দুবাইয়ের ওই পাকিস্তানি ট্য়াক্সিচালক মোদাসার লক্ষ করেন, তাঁর গাড়িতে পড়ে রয়েছে একটি পার্স। পরে যে যাত্রী ওঠেন, তাঁর কাছে জানতে চান পার্সটি তাঁর কিনা। স্বভাবতই তিনি অস্বীকার করেন। তখন খোঁজ শুরু করেন মোদাসার। তখন ওই পার্স খুলে দেখতে শুরু করেন, কোনও ঠিকানা-টিকানা রয়েছে কিনা। সেইসময়ে ওই ভিসাটি চোখে পড়ে তাঁর। পুলিশে খবর দেন। শেষ অবধি রোজের বাড়িতে পৌঁছে যায় ওই ইউকে ভিসা-সহ ওই পার্স।
পাকিস্তানি ট্য়াক্সিচালকের এই সততায় আনন্দে অভিভূত হয়ে যায় রোজের পরিবার। রোজের বাবা কয়েকহাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দিতে চাইলে মোদাসার বলেন, "ও আমার ছোট বোনের মতো। টাকা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।"