বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে রাশিয়ার বিরোধী দলনেতা অ্যালেক্সি নাভালানিকে। ৪৪ বছরের এই রাশিয়ান রাজনীতিকে চায়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, এমন অভিযোগই উঠছে। তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার অচেতন অবস্থায় নাভালানিকে সাইবেরিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন রাশিয়ার বিরোধী দলনেতা। বৃহস্পতিবার সকালে এই দুঃসংবাদটি দেন নাভালানির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ। এক ট্যুইট বার্তায় কিরা ইয়ারমিশ বলেন, “রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি বছর ৪৪-এর অ্যালেক্সি নাভালানি সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে বিমানে মস্কোয় ফিরছিলেন। আকাশ পথে যাত্রার সময়ই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনই টমস্কতে বিমানটিকে জরুরি অবতরণ করান পাইলট। ততক্ষণে বিমানেই জ্ঞান হারিয়েছেন অ্যালেক্সি নাভালানি। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আপাতত ভেন্টিলেশনে রয়েছেন এই রুশ রাজনীতিক। সকালবেলা চা পান করেন অ্যালেক্সি নাভালানি। সম্ভবত ওই চায়ের সঙ্গেই কিছু মেশানো ছিল। যার ফলেই তিনি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
কিরা ইয়ারমিশ আরও বলেন, “পরীক্ষা নিরিক্ষার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অ্যালেক্সি নাভালানির শরীরে গরম তরলের সঙ্গে গিয়েছে বিষ।” নাভালানিকে দেওয়া চায়ের মধ্যে বিষ মেশানো হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁর মুখপাত্র। এর পরেই অ্যালেক্সি নাভালানির প্রতিনিধি দলের তরফে ওই হাসপাতাল থেকেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে অ্যালেক্সি নাভালানির শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট সঙ্কটজনক। হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকের বিবৃতি পেয়ে এমনটাই জানালো রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ৪৪ বছর বয়সী অ্যালেক্সেই নাভালনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক। গত জুনে আরও দুই দফা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাশিয়ার সংবিধান সংশোধন করেন পুতিন। তখন ওই ঘটনাকে ‘সংবিধান লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নাভালনি।
আরও পড়ুন: কাজে এল না চিনের জারিজুরি, ভারতের পাশেই থাকার আশ্বাস দিলেন হাসিনা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসাবে জনপ্রিয় নাভালানি। পুতিন সরকারের উর্ধ্বতন কমর্কতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারের জন্য ৪৪ বছরের এই রাজনীতিক বেশ পরিচিত। এর আগেও তিনি এই ধরনের শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। গতবছরও একবার অ্যালেক্সি নাভালানিকে বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় এক প্রশাসনিক অভিযোগের ভিত্তিতে জেলবন্দি ছিলেন অ্যালেক্সি নাভালানি। বন্দি অবস্থাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে জেল থেকে তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই সময়ও নাভালানির দলের সন্দেহ হয়েছিল যে তাঁকে বিষ প্রয়োগেই মেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। তবে সেই সময় চিকিৎসকরা বলেছিলেন, অ্যালেক্সি নাভালানির অ্যালার্জি রয়েছে। কোনও কিছু খাবার থেকেই তাঁর শরীর এতটা খারাপ হয়েছে। ওই দিনই সুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের জেলে ফেরেন অ্যালেক্সি নাভালানি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আরও একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল ইই রাজনীতিককে। তবে এবার তাঁর খাবারে বিষ প্রয়োগের ঘটনাটি জানাচ্ছেন স্বয়ং হাসপাতালের চিকিৎসকও।
গত জুনে আরও দুই দফা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাশিয়ার সংবিধান সংশোধন করেন পুতিন। তখন ওই ঘটনাকে ‘সংবিধান লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নাভালানি। ২০১৭ সালে তাঁকে লক্ষ্য করে জীবাণুনাশকও ছোড়া হয়ছিল। এবার ফের নাভালানির উপর বিষপ্রয়োগ নিয়ে রাশিয়ার রাজনীতি যে উত্তপ্ত হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।