স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে মহিলা সেনাদের পায়ে হাইহিল
গত সপ্তাহে এই ছবিই প্রকাশ করেছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক
এদিন অবশ্য সেই পরিকল্পনা বাতিলের কথা জানালো তারা
তার আগে সংসদের মধ্য়েই চূড়ান্ত অপদস্থ হতে হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে
অবশেষে পিছিয়ে আসাতে বাধ্য় হলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সংসদে বসে একের পর এক মহিলা সাংসদদের হাতে যেভাবে চুড়ান্ত অপদস্থ হতে হয়েছে, এছাড়া উপায়ই বা কি ছিল? গত সপ্তাহেই তাঁর মন্ত্রক একটি ছবি প্রকাশ করেছিল, যেখানে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজের অনুশীলনে মহিলা সেনাদের কালো রঙের হাইহিলের পাম্প শু পরা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। আর সেই ছবি নিয়েই তৈরি হয়েছিল তীব্র বিতর্ক। গোটা পৃথিবী থেকে নেটিজেনরা যেমন সমালোচনা করেছেন, তেমনই ইউক্রেনের মহিলা সাংসদরাও, 'পুরুষ প্রতিরক্ষামন্ত্রী'র বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন। তাতেই সোমবার, শেষ পর্যন্ত হাইহিল পরে কুচকাওয়াজের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে বলে জানালো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
আগামী ২৪ অগাস্ট, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন ইউক্রেন দেশ প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পূর্ণ হবে। সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত কুচকাওয়াজেই বরাবরের পরিচিত সেনাদের বুট ছেড়ে ইউক্রেনের মহিলা সেনাদের হাইহিল জুতো পরে কুচকাওয়াজ অনুশীলনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কালো রঙের হাইহিল জুতো পরে কুচকাওয়াজ করতে তাদের যথেষ্টই নাকাল হতে হয়। ইভানা মেদভেদ নামে এক এক ক্যাডেট জানিয়েছিলেন বুট পরে প্যারেড করার থেকে এটা অনেক কঠিন। তবে তাঁরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশ মানতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলে একযোগে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই নির্দেশকে 'মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা' বলেছেন। কেউ বলেছেন, হাইহিল পরে কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া মহিলাদের জন্য অবমাননাকর, এটা মহিলাদের নিয়ে উপহাস করা।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে সমালোচনা সীমাবদ্ধ থাকলে একরকম ছিল, কিন্তু, সংসদে এই নিয়ে গত শুক্রবার তুমুল হইচই হয়েছিল। বেশ কয়েকজন মহিলা সাংসদ ওই দিন সংসদে হাজির হয়েছিলেন হাইহিল জুতো নিয়ে। সেগুলি তাঁরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আন্দ্রি তারানকে উপহার দেন। তাঁরা দাবি জানান, স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে মন্ত্রীকেও ওই হাইহিল জুতো পরেই যেতে হবে।
গোলোস পার্টির সদস্য ইনা সোভসুন হাইহিল জুতো পরে প্যারেড করায় মহিলা সৈনিকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, 'মহিলাদের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর ও নির্বোধ একটি পরিকল্পনা। ইউক্রেনের মহিলা সৈন্যরাও পুরুষদের মতোই সমান জীবনের ঝুঁকি নেন। এমন উপহাস তাঁদের প্রাপ্য নয়।' প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিতর্কিত উদ্যোগের সমালোচনা করেছিলেন ইউক্রেনের ডেপুটি স্পিকার ওলেনা কোনদাতইয়ুক-ও। 'ইউক্রেন সরকারের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত', বলে মন্তব্য করেন তিনি। এমনকী শাসক দলের মহিলা সাংসদরাও সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই পিছিয়ে এল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।