
প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু পাকিস্তানে তার চাকরির বছরগুলো নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি সিআইএ-র কার্যকলাপ, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা এবং সন্ত্রাস দমনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছে, আমেরিকা কী করে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফকে কোটি কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য করেছিল। পরিবর্তে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করত আমেরিকা। তিনি আরও জানিয়ে দেন, আমেরিকা স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করে। কারণ সেখানে মিডিয়া আর জনগণের কোনও চাপ থাকে না।
সিআইএ কর্তা আর জানিয়েছেন, পর্দার আড়ালে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুশারফ সেই সময় দ্বিমুখী খেলায় মেতেছিল। একদিকে আমেরিকার হাত ধরে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মনোভাব দেখিয়েছিল। অন্যদিকে সেই সময়ই ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী আর সৈন্যদের সক্রিয় করছিল। কিন্তু সিআইএ সবকিছু জেনেও মুখ বন্ধ করেছিল।
তিনি আরও প্রকাশ করেছেন যে কীভাবে আমেরিকান প্রতিরক্ষা ঠিকাদারের তহবিল এবং নগদ পুরস্কার আইএসআই-এর কিছু কর্মকর্তাকে ধনী করেছিল, যা মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিল এবং প্রায়শই লেনদেনভিত্তিক দিকটি তুলে ধরে।
এএনআই-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি কি একটা কথা যোগ করতে পারি? আমার মনে হয়, ভারতের দিকে নজর রাখা পাকিস্তানি গোষ্ঠীগুলো আমেরিকান প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের টাকার কারণে লাভবান হয়েছে। তাদের প্রতিরক্ষার সমস্ত সরঞ্জাম ভারতের দিকে ঘোরানো ছিল। এবং আমি আরও একটা কথা যোগ করব, আমরা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরস্কার হিসেবে কোটি কোটি ডলার নগদ দিয়েছি। আর ঈশ্বরই জানেন তারা সেই টাকা দিয়ে কী করেছে।"
কিরিয়াকু, যিনি সিআইএ-তে ১৫ বছর কাজ করেছেন, যার অর্ধেক বিশ্লেষণ এবং বাকিটা সন্ত্রাস দমন অভিযানে, তিনি ২০০২ সালে ৯/১১ হামলার ঠিক পরে পাকিস্তানে সিআইএ-র সন্ত্রাস দমন অভিযানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
"আমার কাজ ছিল আল-কায়েদার যোদ্ধা ও নেতাদের খুঁজে বের করা এবং তাদের ধরা। এক মিনিট। আমি ইসলামাবাদে থাকলেও, আমি সারা দেশে কাজ করেছি, পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত। আমি লাহোর এবং ফয়সালাবাদ, কোয়েটাতে অনেক সময় কাটিয়েছি, যা বসবাস এবং কাজ করার জন্য একটি কঠিন জায়গা ছিল," তিনি বলেন।
এই সময়ে, কিরিয়াকু আবু জুবায়দাহ সহ উচ্চ-মূল্যের লক্ষ্যবস্তুগুলোকে ট্র্যাক করে ধরেছিলেন। "আমরা তখন ভুলভাবে বিশ্বাস করতাম যে আবু জুবায়দাহ আল-কায়েদার তিন নম্বর ব্যক্তি। তিনি তিন নম্বর ছিলেন না। তিনি কখনও আল-কায়েদায় যোগ দেননি। তিনি অবশ্যই আল-কায়েদার সমর্থনে কাজ করছিলেন। তিনি পেশোয়ারে আল-কায়েদার সেফ হাউস 'হাউস অফ মার্টায়ার্স' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফগানিস্তানে আল-কায়েদার দুটি প্রশিক্ষণ শিবির প্রতিষ্ঠা ও কর্মী নিয়োগ করেছিলেন, একটি কান্দাহারে, অন্যটি হেলমান্দে," তিনি বলেন।
জন কিরিয়াকু এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সৌদি সরকারের 'সরাসরি হস্তক্ষেপে'র কারণে আমেরিকা পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার জনক এবং পারমাণবিক প্রযুক্তি পাচারকারী আব্দুল কাদির খানকে নিকেশ করা থেকে বিরত ছিল।
এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিরিয়াকু অনেক গোপন কথাই ফাঁস করেছেন। কিরিয়াকু বলেন, "আমার এক সহকর্মী এ কিউ খানকে নিয়ে কাজ করছিলেন।" "আমরা যদি ইজরায়েলি পন্থা নিতাম, তাহলে আমরা তাকে মেরেই ফেলতাম। তাকে খুঁজে বের করা খুব সহজ ছিল। আমরা জানতাম সে কোথায় থাকে। আমরা জানতাম সে তার দিন কীভাবে কাটায়। কিন্তু তার ওপর সৌদি সরকারের সমর্থনও ছিল। আর সৌদিরা আমাদের কাছে এসে বলেছিল, 'দয়া করে ওকে একা ছেড়ে দিন। প্লিজ। আমরা এ কিউ খানকে পছন্দ করি। আমরা এ কিউ খানের সাথে কাজ করছি। আমরা পাকিস্তানিদের ঘনিষ্ঠ...ওরা বাদশাহ ফয়সালের নামে ফয়সালাবাদের নামকরণ করেছে। ওকে একা ছেড়ে দিন'," প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা বলেন।