
কারাকাস: ভেনিজুয়েলার 'কার্টেল অফ দ্য সানস'কে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে আমেরিকা। এই সংগঠনটির নেতৃত্বে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন বলে অভিযোগ। 'কার্টেল অফ দ্য সানস'কে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার ফলে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই সংগঠনকে লক্ষ্যবস্তু করতে এবং ধ্বংস করার জন্য আরও বেশি ক্ষমতা পাবে। গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকা মাদুরোর বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়ে আসছিল, অভিযোগ ছিল যে তার সরকার অবৈধ। তবে, আমেরিকার এই সিদ্ধান্তকে 'হাস্যকর নতুন মিথ্যা' বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভেনিজুয়েলা। ভেনিজুয়েলা সরকারের দাবি, আমেরিকা এমন একটি সংগঠনকে জঙ্গি ঘোষণা করেছে যার কোনো অস্তিত্বই নেই।
ভেনিজুয়েলা এই পদক্ষেপকে তাদের তেলক্ষেত্রগুলো দখল এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অভিযোগ হলো, 'কার্টেল অফ দ্য সানস' মাদক পাচারে ভেনিজুয়েলাকে সাহায্য করে। ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী দিওসদাদো ক্যাবেলো মার্কিন এই পদক্ষেপকে 'নতুন আবিষ্কার' বলে উপহাস করেছেন। আমেরিকার অভিযোগ, ক্যাবেলোও এই সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্যাবেলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমেরিকা তাদের অপছন্দের লোকদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য কৌশল তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, কেউ তাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আমেরিকা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। ভেনিজুয়েলার এই দাবির সমর্থনে কলম্বিয়াও এগিয়ে এসেছে যে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই।
কলম্বিয়া আমেরিকার এই সিদ্ধান্তকে তাদের কথা না শোনা সরকারগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করার একটি কৌশল হিসেবে দেখছে। তবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, 'কার্টেল অফ দ্য সানস'-এর অস্তিত্ব শুধু আছে তাই নয়, এটি ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, আইনসভা এবং বিচার বিভাগকে দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। তবে বিবিসি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করেছে যে, সত্য এই দুই যুক্তির মাঝামাঝি কোথাও রয়েছে। 'কার্টেল অফ দ্য সানস' নামটি প্রথম শোনা যায় ১৯৯০-এর দশকে। ভেনিজুয়েলার মাদক কার্টেলের নেতাদের বোঝাতে সেখানকার গণমাধ্যম প্রথম এই নামটি ব্যবহার করে। ভেনিজুয়েলার জাতীয় বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে মাদক চক্রের সম্পর্কের খবরে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। সিনিয়র সামরিক পদমর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত সূর্যের চিহ্ন থেকেই এই নামের উৎপত্তি। সংগঠিত অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কোকেন উৎপাদনকারী দেশ কলম্বিয়ার কার্যকলাপের পর ১৯৮০-এর দশকের শেষ এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে এই সংগঠনটি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সেই সময়ে, ভেনিজুয়েলার শহরগুলিতে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত মেডেলিন কার্টেল। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান জোরদার হলে, 'কার্টেল অফ দ্য সানস' মাদক পাচারের জন্য নতুন পথ তৈরি করে দিয়ে এই অঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হুগো শ্যাভেজের প্রেসিডেন্সির সময় 'কার্টেল অফ দ্য সানস' ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়। মাদুরো যখন সামরিক কর্মকর্তাদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছিলেন না, তখন মধ্যম সারির কর্মকর্তারা মাদক চক্রের প্রতি অনুকূল মনোভাব গ্রহণ করেন বলে বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেন। ২০২০ সাল থেকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট মাদুরো এবং আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ান গোষ্ঠীর সাথে মিলে আমেরিকায় ব্যাপকভাবে মাদক পাচারের অভিযোগ এনেছিল।