ল্য়াপটপের ওপর ঝুঁকে পড়েছে ক্লান্ত শরীর। আধোঘুমে আর ক্লান্তিতে জুড়়িয়ে এসেছে চোখ। হয়তো-বা একটু ঝিমিয়ে পড়েছেন তিনি। হয়তো-বা কোনফাঁকে একটু ঘুমিয়েই পড়েছেন। করোনাবিধ্বস্ত ইতালির নার্স এলেনা পাগলিয়ারিনির এই সাদাকালো ছবিই এখন গোটা দুনিয়াকে যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে ফ্লোরেন্স নাইটএঙ্গেলের কথা।
করোনার এপিসেন্টার এখন চিন থেকে সরে এসেছে ইউরোপে। হু জানাচ্ছে, গত কয়েকদিনে ইউরোপে যত সংখ্য়ক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তা চিনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর ইউরোপের মধ্য়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ইতালি। ইতালিতে করোনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্য়া দাড়িয়েছে ১৪০০। আক্রান্তের সংখ্য়া ২১০০০ ছাড়িয়েছে। বলাই বাহুল্য়, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে ডাক্তার আর নার্সদের ওপর। দেশের সমস্ত হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার বেডের চারভাগের একভাগই এখন করোনা আক্রান্তদের দখলে।
এমনিতে, ইতালির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র লামবার্ডিতে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য় পরিষেবা পাওয়া যায় সারাবছর। করোনার মরসুমে সেখানকার ডাক্তার ও স্বাস্থ্য়কর্মীদের ঘুম উধাও হয়ে যাওয়ার জোগাড়। পাগলিয়ারিনি সেখানকারই একজন নার্স। নিজের এই ভাইরাল ছবি দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, "সব জায়গায় ছবিটা দেখে একদিক থেকে আমি খুব চিন্তিত। নিজের দুর্বলতা এইভাবে প্রকাশ করার জন্য় আমি লজ্জিত। আবার একইসঙ্গে আমি খুশিও বটে। অনেকেই এই ছবি দেখে আমাকে খুব ভাল মেসেজ পাঠাচ্ছেন, আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন। আসলে কী জানেন, আমি ঠিক শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করি না। আমি টানা ২৪ ঘণ্টাও কাজ করতে পারি স্বচ্ছন্দে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমি লুকোতে চাই না। আমি খুব ভীত এখন। কারণ এখন আমরা একজন অজানা শত্রুর (করোনাভাইরাসের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছি।"
সব খারাপেরই বোধহয় ভাল দিক থাকে। ডাক্তার-নার্স ও রোগীর মধ্য়েকার সম্পর্ক যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল, তখন করোনার চিকিৎসাকে ঘিরে তা যেন আবার ভরসা জাগিয়ে বেঁচে উঠল নতুন করে।