
নয়াদিল্লি। চিন এমন একটি মিসাইল তৈরির দাবি করেছে যা ম্যাক ৫ (অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়ে পাঁচগুণ বেশি) গতিতে উড়তে উড়তে নিজের আকার বদলাতে পারে। এটা শুনতে কোনো সাইন্স-ফিকশন সিনেমার মতো মনে হলেও, বেইজিং একে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ ডিফেন্স টেকনোলজি (NUDT)-র অধ্যাপক ওয়াং পেং এবং তার দল এই প্রোটোটাইপটি তৈরি করেছেন। এই "মর্ফিং হাইপারসনিক মিসাইল" ওড়ার সময় তার ডানাগুলিকে অ্যাডজাস্ট করতে পারে, যার ফলে এর গতি, লিফট এবং দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়।
এই মিসাইলে ভাঁজ করা যায় এমন ডানা (retractable wings) লাগানো আছে, যা প্রয়োজনে ফিউজলেজের ভেতরে ঢুকে যায়। এর ফলে বাতাসের চাপ কমে এবং গতি বেড়ে যায়। যখন লিফট বা মোড় নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন এই ডানাগুলো আবার বাইরে বেরিয়ে আসে।
সবচেয়ে বিশেষ ব্যাপার হলো, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ রিয়েল-টাইম কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে হয়, অর্থাৎ মিসাইলটি হাওয়ায় থাকাকালীন নিজেকে অ্যাডজাস্ট করতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এতে ব্যবহৃত অ্যালগরিদম "সুপার-টুইস্টিং স্লাইডিং মোড কন্ট্রোল"-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা মিসাইলকে ঝাঁকুনি ছাড়াই মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটাই হাইপারসনিক উড়ানের "হোলি গ্রেল"।
চিনা বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এই বাধাগুলো পার করা এখনও বাকি আছে। তবে, তাদের মতে ভবিষ্যতে এই একই প্রযুক্তি বেসামরিক হাইপারসনিক ভ্রমণের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত কয়েক বছরে, চিন বেশ কয়েকবার দাবি করেছে যে তার হাইপারসনিক মিসাইলগুলো চলমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে — তা সে স্টিলথ ফাইটার জেট হোক বা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। আগে পশ্চিমী বিশ্লেষকরা এটাকে প্রচার বলে মনে করতেন, কিন্তু এখন চিনের CJ-1000 হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল এবং এই নতুন “শেপ-শিফটিং” মিসাইলের খবরে তারা সতর্ক হয়ে গেছেন।
যদি চিন এই প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তবে এটি হাইপারসনিক দৌড়ে তাকে আমেরিকা ও রাশিয়ার তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে দেবে। বিজ্ঞানীদের মতে, মর্ফিং হাইপারসনিক সিস্টেম ভবিষ্যতের যুদ্ধ এবং মহাকাশ গবেষণা উভয় ক্ষেত্রেই বিপ্লব আনতে পারে।
এখনও পর্যন্ত মিসাইলটিকে প্রকাশ্যে দেখানো হয়নি। বেইজিং এটিকে তাদের সামরিক প্যারেডে একটি সিল করা ক্যানিস্টারের মধ্যে প্রদর্শন করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই গবেষণা বিশ্বকে জানাচ্ছে যে চিন "রূপ পরিবর্তনকারী মিসাইল"-এর যুগের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।