
বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট বাজার দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ২০২৭ সালের মধ্যে ইলেকট্রনিক লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি আরবও এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের মূল স্রোতে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে। সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশটিকে একটি ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়া, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে খুচরো লেনদেনের অন্তত ৮০ শতাংশ ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পন্ন করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ১৫ সেপ্টেম্বর রিয়াধে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফিনটেক সম্মেলন Money20/20-তে সৌদি আরবের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (Saudi Central Bank – SAMA) আনুষ্ঠানিকভাবে Google Pay চালুর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত এই সেবার মাধ্যমে এখন সৌদি গ্রাহকরা তাদের Mada ডেবিট কার্ড, ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক কার্ড Google Wallet-এ যুক্ত করে স্মার্টফোন বা ওয়্যারেবল ডিভাইসের সাহায্যে কনট্যাক্টলেস লেনদেন করতে পারবেন। এতে দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পরিবহন খাতে পেমেন্ট হবে আরও দ্রুত ও নিরাপদ।
শুধু Google Pay-ই নয়, একই অনুষ্ঠানে সৌদি আরব অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যাতে দেশে চালু হবে Alipay+ সেবা। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যটক, বিশেষ করে হজ ও উমরাহ উপলক্ষে আগত কোটি কোটি মুসলিম ভ্রমণকারী, নিজেদের আঞ্চলিক ই-ওয়ালেট যেমন Alipay, WeChat Pay, GCash, KakaoPay, TrueMoney ব্যবহার করে সহজে লেনদেন করতে পারবেন। মুদ্রা বিনিময়ের ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে খরচ মেটাতে পারা পর্যটন অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলবে।
SAMA-র গভর্নর আয়মান আল-সায়ারি এই ঘোষণা উপলক্ষে বলেন, “২০২২ সালের শেষে যেখানে ফিনটেক কোম্পানির সংখ্যা ছিল মাত্র ৮২, সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১-এ।” তিনি জানান, সৌদি আরব অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড়ো ফিনটেক মার্কেটে পরিণত হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সৌদি আরবে মোট খুচরো লেনদেনের ৭৯ শতাংশ ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ফিনটেক খাতে বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই ৯ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল, অর্থাৎ প্রায় ২.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এটি প্রমাণ করে দেশটি একটি ক্যাশলেস সোসাইটির পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ফিনটেক বিশেষজ্ঞদের মতে, Google Pay ও Alipay+ চালুর ফলে সৌদি আরবের ই-কমার্স বাজার, রিটেল ব্যবসা, এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে প্রতিযোগিতা বেড়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনও সামনে আসবে।
‘ভিশন ২০৩০’-এর মাধ্যমে দেশটি শুধু তেলের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি থেকে সরে এসে প্রযুক্তি-চালিত নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে। রিয়াধে ঘোষিত এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, সৌদি আরব আগামী দিনগুলোতে শুধু উপসাগরীয় অঞ্চল নয়, বরং বৈশ্বিক ফিনটেক মানচিত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।