
তুমুল বিকর্তের মধ্যেই জাকার্তা থেকে বর্নিওতে রাজধানী সরাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নতুন রাজধানী নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বোর্নিও দ্বীপে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজধানী। কর্মকর্তাদের কথায় নতুন রাজধানী হবে 'সাসটেনেবেল ফরেস্ট সিটি।' পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলেও জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
জলবায়ু পরবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার ওপর। রাজধানী দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে জাভা সাগরে। তাছাড়াও এই শহরটি প্রবল দুষিত। ভূমিকম্পের ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে।
রাজস্থানীয় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত। যে পরিবেশ দুষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাজধানী স্থানান্তরের কথা বলছে ইন্দোনেশিয়া সরকার- সেই একই ক্ষতি হবে বোর্নিওতে। কারণ সেখানে ওরাংওটাং-দের মত বিপন্ন প্রানীদের বাসস্থান। কিছু আদাবাসী মানুষের বাস। যাদের বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে পরিবেশবীদরা।
জার্তাতায় প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষের বাস। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রোপলিটান শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। এলাকার তিন গুণ বেশি মানুষ এখানে বাস করেন। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ডুবে যাওয়া শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। মনে করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে শহরের একতৃতীয়াং জলের চলায় তলিয়ে যাবে।
জাকার্তার জল অত্যান্ত দূষিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দূষণ বাড়ছে জদ্রুত। ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন একটি বড় সংস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানীয় জলের পরিমাণ কমছে। জাভা সাগরে বাড়ছে নোনা জল।
জার্কাতার বায়ু অত্যান্ত দুষিত। দূষিত এই রাজধানীর জলই। বন্যা এখানে প্রত্যেক বছরের ঘটনা। যানজটের সমস্যা অত্যান্ত তীব্র। যানজটের কারণে বছরে খরচ হয়ে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই রাজধানী সরানোর পরিকল্পনা ইন্দোনেশিয়া সরকারের।
নিউইয়র্কের মতই হবে এই শহর। তবে নিউ ইয়র্কের থেকে অনেক বেশি জাঁকমপূর্ণ হবে। বোর্নিও শহর হবে ফরেস্ট সিটি। এখানে উদ্যান আর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে কেন্দ্র করেই শহরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতের যাতে শহরটি সবুজ রাখা যায় তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছে জাকার্তা সরকার।
সরকারের এই পদক্ষেপ চিন্তা বাড়িছে পরিবেশবীদদে। কারণ এটাই হল ওরাংওটাংদের বাসস্থান। বন উজাড় হয়ে গেলে তারা থাকবে কোথায়। বর্নিওর পূর্বে কালিমান্তান প্রদেশ। সেখানেই তৈরি করা হচ্ছে নতুন শহর। সেখানে রয়েছে চিতাবাঘ ও অন্যান্য প্রাণী।
বনায়ন এবং আহরণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অনুমতি দেওয়া যেতে পারে যা আরও বন উজাড়ের দিকে পরিচালিত করবে। এখন পর্যন্ত নতুন রাজধানী শহর এলাকায় অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনের সুরক্ষার অবস্থা সম্পর্কে কোনো নিশ্চিততা পাওয়া যায়নি, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ এপি আরও দেখিয়েছে যে অঞ্চলটি আগামী বছরগুলিতে প্রচণ্ড গরমের আরও দিন আশা করতে পারে।
নতুন শহর নির্মাণের কারণে ভিটেমাটি হারাবে প্রায় ১০০টিরও বেশি আদিবাসী পরিবার। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা এই পরিবারগুলি। ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের জমির অংশ।
ইন্দোনেশিয়া সরকার বলছে এই কাজে পুরোপুরি সায় রয়েছে আদিবাসী পরিবারগুলির। তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয়েছে। তাদের অন্যত্র সরানো হবে না। নতুন শহরেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের জীবনেও কোনও পরিবর্তন আনা হবে না।