
পাহলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে। উভয় দেশই একের পর এক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কার্যকরভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্থবির করে দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া:
২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বেশ কিছু সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে:
ভিসা বাতিল: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জারি করা সমস্ত বৈধ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল ভিসা ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত বৈধ থাকবে। বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভ্রমণ নির্দেশিকা: ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তান ভ্রমণ না করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থানরতদের দ্রুত ভারতে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক পদক্ষেপ: ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ককে অবনমিত করেছে, পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করেছে এবং ইসলামাবাদে তার কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমিয়েছে।
সিন্ধু নদী চুক্তি: দশকের পুরনো সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ:
প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ঘোষণা করেছে:
বাণিজ্য স্থগিত: তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পরিচালিত বাণিজ্যসহ ভারতের সাথে সমস্ত বাণিজ্য অবিলম্বে স্থগিত করা হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: পাকিস্তান ঘোষণা করেছে যে তারা সিমলা চুক্তিসহ ভারতের সাথে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখবে।
সীমান্ত বন্ধ: ওয়াঘা সীমান্ত ভারত থেকে সমস্ত সীমান্ত পারাপারের জন্য বন্ধ করা হয়েছে, কোনও ব্যতিক্রম ছাড়াই।
আকাশপথ নিষেধাজ্ঞা: ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয়-পরিচালিত সমস্ত বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশপথ অবিলম্বে বন্ধ করা হয়েছে।
কূটনৈতিক পদক্ষেপ: পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক কূটনীতিকদের persona non grata ঘোষণা করেছে এবং ইসলামাবাদে ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে এনেছে।
প্রভাব:
এই ঘটনাবলী ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের তীব্র অবনতির ইঙ্গিত দেয়, যা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানকে প্রভাবিত করে। ১৯৭২ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর সিমলা চুক্তি স্থগিত করার ফলে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ এবং সংঘাত নিরসনের ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং সংলাপে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যাতে আরও অবনতি রোধ করা যায়।