
অন্তরীক্ষ থেকে আসা রহস্যময় রেডিও সিগন্যাল সবসময় বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে রেখেছে। গত বছর বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিগন্যাল দেখতে পান যা প্রতি দুই ঘণ্টায় দুটি বার পুনরাবৃত্তি হয়। অবশেষে এর রহস্যের সমাধান হয়েছে।
জানা গিয়েছে যে এই সংকেত একটি বিশেষ বাইনারি সিস্টেম থেকে আসছে, যার মধ্যে একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ এবং তার সঙ্গী একটি ছোট রেড ডোয়ার্ফ অন্তর্ভুক্ত।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই সংকেত প্রথমবারের জন্য প্রায় এক দশক আগে দেখা গিয়েছিল এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার বিগ ডিপার নক্ষত্রপুঞ্জের দিক থেকে আসছে।
কীভাবে এই রেডিও সংকেতের খোঁজ পাওয়া গেল? এই রেডিও সংকেতের সন্ধান করেছেন অ্যাস্ট্রোনমার আইরিস ডি রুইটার, যিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন।
তিনি ২০২৪ সালে লো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে (LOFAR) টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত পুরনো ডেটা খুঁজে এই সংকেতটি খুঁজে পান। LOFAR বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ, যা খুব কম ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সংকেত ধরতে সক্ষম বিএস।
প্রথমবার এই সিগন্যাল ২০১৫ সালের ডেটাতে দেখা গিয়েছিল। এর পরে বিজ্ঞানীরা এই উৎস থেকে ছয়বার এমন একই পলস রেকর্ড করেছেন। এই রেডিও তরঙ্গ কিছু সেকন্ড থেকে শুরু করে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে তাদের বিশেষত্ব ছিল যে তারা প্রতি দুই ঘণ্টায় নিয়মিতভাবে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
হোয়াইট ডোয়ার্ফ কি? হোয়াইট ডোয়ার্ফ একটি তারা, যা তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যখন কোনও তারা তার জ্বালানি পুড়ে ফেলে, তখন সে তার বাইরের স্তরগুলি ছেড়ে দেয় এবং এর অভ্যন্তরীণ অংশ সংকুচিত হয়ে খুব ঘন এবং ছোট হয়ে যায়। এটি একটি সাদা রঙের ঝলমলে বিন্দুতে পরিণত হয়, যা হোয়াইট ডোয়ার্ফ নামে পরিচিত।
এটি কি বিএফআরবি-এর মত? বিজ্ঞানীরা এই সিগন্যালটিকে মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া একটি অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা দ্রুত রেডিও পলস (এফআরবি) নামে পরিচিত, কিন্তু উভয়ের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য ছিল। এফআরবি মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্য ঝলমল করে, সেই সময় নতুন সিগন্যালটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
মৃত তারাদের চুম্বকীয় শক্তির প্রভাব অন্তরীক্ষ বিজ্ঞানীরা এই সিগন্যালের উৎসের বিস্তৃত অধ্যয়ন করেছেন এবং জানতে পেরেছেন যে এটি ILTJ1101 নামক একটি দ্বিগুণীয় পদ্ধতির থেকে আসছে, যা পৃথিবী থেকে ১,৬০০ আলোক-বছর দূরে অবস্থিত।
এখানে একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ এবং একটি রেড ডোয়ার্ফ তারা খুব কাছাকাছি একে অপরকে কক্ষপথে ঘোরাচ্ছে। এই দুই তারাদের মধ্যে তীব্র চুম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে, যা রেডিও সিগন্যাল তৈরি করছে। যখন এই হোয়াইট ডোয়ার্ফ তার সঙ্গী তারাদের কাছে দিয়ে যায়, তখন এর শক্তিশালী চুম্বকীয় শক্তি রেড ডোয়ার্ফে প্রভাব ফেলে, যার ফলে রেডিও তরঙ্গ তৈরি হয়।
কীভাবে গভীরভাবে তদন্ত করা হয়েছিল? বিজ্ঞানীরা এই সিস্টেমের গভীর তদন্ত করতে আমেরিকার এরিকজোনার মাল্টিপল মিরর টেলিস্কোপ (এমএমটি) এবং টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড অবজারভেটরি ব্যবহার করেছেন। এই যন্ত্রগুলি দেখিয়েছে যে রেড ডোয়ার্ফ এবং হোয়াইট ডোয়ার্ফ প্রতি ১২৫.৫ মিনিটে একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
এরপর, বিজ্ঞানীরা এই সিস্টেমের আলোকে ওয়েভলেন্থে বিভক্ত করে অধ্যয়ন করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় তাদের কাছে পৌঁছেছে যে রেড ডোয়ার্ফ অত্যধিক গতিতে সামনে-পিছনে দোল খাচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে এটি একটি অদৃশ্য সঙ্গীর প্রতি গ্রাভিটেশনাল ফোর্স খর্ব করছে। এই অদৃশ্য সঙ্গী একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ তারা বের হলো।