আইপিএলের আরও একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। প্রথমে ব্যাট করে ২০১ রান করে আরসিবি। ব্যাঙ্গালোরের হয়ে দুরন্ত অর্ধশতরান করেন ফিঞ্চ, ডিভিলিয়ার্স, পাড়িকল। অপরদিকে লাগাতার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেলেও, ইশান কিষাণ ও পোলার্ডের অবিশ্বাস্য ইনিংসের সৌজন্যে কার্যত হারা ম্যাচে সুপার ওভারে নিয়ে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সুপার ওভারে মুম্বইকে হারিয়ে ম্যাচ জেতে আরসিবি। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আরসিবির হয়ে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে বেশ কিছু সুযোগ দেন অ্যারন ফিঞ্চ ও দেবদূত পাড়িকল। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দল। তারপরই ঝড়ো ইনিংস খেলা শুরু করেন ফিঞ্চ। একে পর এক বোলারদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্ব শট খেলা শুরু করেন অজি তারকা ব্যাটসম্যান। তাকে যোগ্য সঙ্গত দেন দেবদূত পাড়িকল। প্রথম পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৯। পাওয়ার প্লে-র পর কিছুটা আঁটোসাটো বোলিং করেন আরসিবি বোলাররা। কিন্তু এরইমধ্যে নিজের অর্ধশতরানও পূরণ করে ফেলেন অ্য়ারন ফিঞ্চ। নবম ওভারের শেষ বলে আউট হন অ্যারন ফিঞ্চ। ট্রেন্ট বোল্টের বলে আউট হন তিনি। ফিঞ্চ করেন ৩৫ বলে ৫২ রান। ৭টি চার ও একটি ৬ মারেন তিনি। ১০ ওভার শেষে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ৮৫ রানে এক উইকেট।
ফিঞ্চ আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু এদিন ফের ব্য়াট হাতে নিরাশ করেন ভিকে। ১৩ তম ওভারে মাত্র ৩ রান করে আউট হন তিনি। বিরাটের উইকেট নেন রাহুল চাহার। এরপর ক্রিজে নেমে বিধ্বংসী ইনিংস খেলা শুরু করে এবি ডিভিলিয়ার্স। ১৫ ওভার ওভার শেষে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১২৩। এরই মধ্যে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন দেবদূত পাড়িকল। অপরদিকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তারকা বোলরা জরপ্রীত বুমরাকে একের পর এক বড় বড় ছয় মারতে থাকেন ডিভিলিয়ার্স। হাত খোলেন পাড়িকলও। কিন্তু ১৮ ওভারের শুরুতে বোল্টের বলে বলে আউট হন পাড়িকল। ৫৪ রান করেন তিনি। কিন্তু সেই ওভারেও বোল্টকে একটি বিশাল ছক্কা হাঁকান ডিভিলিয়ার্স। ১৯ তম ওভারেও বুমরাকে নিয়ে ছেলেখেলা করেন এবিডি। একইসঙ্গে মাত্র ২৩ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০ তম ওভারে প্য়াটিনসনকে তিনটি ছয় মারেন শিবম দুবে। ২০ ওভার শেষে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ২০১ রান। ২৪ বলে ৫৫ রান করে নট আউট থাকেন এবি ডিভিলিয়ার্স ও ১০ বলে ২৭ রান করে নট আউট থাকেন শিবম দুবে।
২০২ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ৮ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে আউট হন মুম্বই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বিরাট কোহলিকে। তৃতীয় ওভারেই উদানার বলে খাতা না খুলেই আউট হয়ে যান সূর্যকুমার যাদব। যদিও অপরদিক থেকে নিজের ইনিংস চালিয়ে যান তরুণ ইশান কিষাণ। পাওয়ার প্লে-র ৬ব ওভার শেষে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কোর দাঁড়ায় ৩৫ রানে ২ উইকেট। সপ্তম ওভারে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় রোহিত শর্মার দলের। চাহলের বলে ১৪ রান করে আউট হন কুইন্টন ডিকক। এরপর মুম্বইয়ের ইনিংস কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যান হার্দিক পান্ডিয়া ও ইষাণ কিষান। কিছু আক্রমণাত্বক শটও খেলেন হার্দিক পান্ডিয়া ও ইশান কিষাণ। ১০ ওভার শেষে চার বারের আইপিএল জয়ীদের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৩।
১২ তম ওভারে চুতুর্থ উইকেট পড়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি করেন ১৫ রান। যদিও এরপর রানের গতিবেগ কিছুটা বাড়ান ইশান কিষাণ। নিজের অর্ধশতরানও পূরণ করেন তিনি। অপরদিক থেকে তাকে সঙ্গ দেব কায়রন পোলার্ড। ১৫ ওভার শেষে মুম্বইয়ের স্কোর দাঁড়ায় ১১২ রানে ৪ উইকেট। ১৭ তম ওভারে বিধ্বংসী রূপ নেন কায়রন পোলার্ড। জাম্পার এক ওভারে আসে ২৭ রান। একইসঙ্গে ম্যাচে ফেরে মুম্বই। ১৮ তম ওভারেও রানের ঝড় তোলেন পোলার্ড। ২০ বলে অর্ধশতরান পূরণ করেন ক্যারেবিয়ান তারকা। ১৮ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১৭১। ১৯ তম ওভারে আসে ১২ রান। একইসঙ্গে মাত্র ৪৮ বলে ১০০ রানের পার্টনারশিপ করেন পোলার্ড ও ইশান কিষাণ। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। পরপর দুটি ছয় মারেন ইষাণ কিষান। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন ইশান কিষাণ। ৯৯ রানে আউট হন তিনি। শেষ বলে জয়ের জন্য মুম্বইয়ের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। শেষ বলে চার মারেন পোলার্ড। আর আইপিএল ২০২০-র দ্বিতীয় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। ২৪ বলে ৬০ করে অপরাজিত থাকেন পোলার্ড।
সুপার ওভার আরসিবির হয়ে বল করতে আসেন নবদীপ সাইনি। প্রথম বলে আসে এক রান। দ্বিতীয় বলেও আসে এক রান। তৃতীয় বলে পোলার্ডকে বিট করেন সাইনি। চতুর্থ বলে চার মারেন পোলার্ড। পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ আউট হন পোলার্ড। শেষ বলে আসে এক রান। আরসিবি জন্য সুপার ওভারে টার্গেট দাঁড়ায় ৮ রান। মুম্বইয়ের হয়ে বলে আসেন বুমরা। প্রথম বলে আসে ১ রান। দ্বিতীয় বলেও আসে ১ রান। তৃতীয় বলে ডট বল করেন বুমার। কিন্তু চতুর্থ বলে ৪ মারেন ডিভিলিয়ার্স। পঞ্চম বলে আসে ১ রান। খেলা টাই হয়ে যায়। শেষ বলে চার মেরে আরসিবিকে জিতিয়ে দেন বিরাট কোহলি। জয়ের ফলে গ্রুপ টেবিলে তিন নম্বরে উঠে এল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।