শনিবার রাতে ইনদৌরে ২৬ বছরের এক রূপান্তরকামী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। নাম পলক তিওয়ারি। মাসচারেক আগে তিনি ঘর বেঁধেছিলেন তাঁর মনের মানুষটির সঙ্গে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আটবছর ধরে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। মাসচারেক আগে ঘর বাঁধার পর নিজের লিঙ্গপরিবর্তনের জন্য অপারেশন করিয়েছিলেন পলক। সেই অপারেশন নাকি সফল হয়নি। তারপর থেকেই ভীষণ অবসাদে ভুগছিলেন পলক।
ঘটনার প্রাথমিক অভিঘাত সামলিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই অকালমৃত্যু? নিজের মতো করে সঙ্গী বেছেও খুশি হতে পারলেন না কেন পলক? কেউ বলছেন, রূপান্তরকামীরা শারীরিক বা মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন না। আবার কেউ বলছেন, এটা যার যা নিজস্ব বিষয়। সাধারণ দাম্পত্যেও যেরকম সম্পর্কের ওঠা-পড়া থাকে, এক্ষেত্রেও ঠিক তাই। রূপান্তরকামী মেঘ সায়ন্তন ঘোষের কথায়, "দেখুন এটা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে। তাই কেউ একজন আত্মহত্যা করল মানেই কিন্তু এমন নয়, যাঁরা অপারেশন করিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করছেন, তাঁরা সবাই খারাপ আছেন। আবার এটাও অনেকের ধারণা, রূপান্তরকামী মানেই লিঙ্গ পরিবর্তন করান। আমি নিজেই তো তা করিনি, কারণ আমার তো তা মনে হয়নি?"
ডা. জ্যোতির্ময় সমাজদারের অবশ্য মনে করেন, "সমাজের সঙ্গে একটা সংঘাত চলে এদের অনবরত। তাই বাইরে থেকে এদের যতটা খুশি বলে মনে হয়, ততটা খুশি কিন্তু এরা সবসময়ে হয় না। আমার একজন পেশেন্ট আছেন, যিনি সাতবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আসলে কিছু সেলিব্রিটি বাদ দিলে দেখা যায়, এরা কিন্তু কমবেশি সমাজে আজও প্রত্যাখ্যাত, বাড়িতেও তাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮-র ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ আমলের আইনকে খারিজ করে এদেশেও সমকামী সম্পর্ককে বৈধতা দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দুজন সমকামী হোক কি রূপান্তরকামী, কোনও সম্পর্কই আর আইনের চোখে অবৈধ নয়। এখন তো সমাজেও রূপান্তরকামীদের গ্রহণযোগ্যতা আগের থেকে বেড়েছে। ভোটের সময়ে বুথে পুলিশ অফিসারের ভূমিকাতেও দেখা যায় এখন তাঁদের. এমনি বিচারকের পদেও রয়েছেন তাঁরা. এই পরিস্থিতিতে পলক তিওয়ারির আত্মহত্যা নেহাতই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করেন কলকাতার এলবিজিটি কমিউনিটির সদস্যরা।