মোবাইলের টর্চ জ্বেলে পুরুলিয়ার গ্রামে ঢুকলেন বাবুল সুপ্রিয়, গ্রামের লোক বললেন 'রাজনীতি'

  • হাতির হানায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন বাবুল সুপ্রিয়
  • কেন্দ্রীয় বন প্রতিমন্ত্রী গেলেন পুরুলিয়ার একটি গ্রামে
  • গ্রামে আলো না-থাকায় টর্চ জ্বেলে ঢুকলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
  • মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর গ্রামের লোকেরা বললেন, 'রাজনীতি'

Sabuj Calcutta | Published : Feb 28, 2020 9:44 AM IST

নাটক না হলেও নাটকীয় তো বটেইরাস্তায় আলো না-থাকায়, সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিনা গ্রামে ঢুকলেন  মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে! বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার ঝালদার ভাকুয়াডি গ্রামে গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় গত বছর ডিসেম্বরে ওই গ্রামের এক প্রৌঢ, মথুর লোহার হাতির হানায় মারা গিয়েছিলেন তাই গ্রামের লোকের  আশা ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসে বোধহয় ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করলেনতাই  বলরামপুর থেকে বহুপথ উজিয়ে এসেছিলেন দয়াময়ী কালিন্দীও যাঁর স্বামী হাতির পালের সামনে পড়ে মারা গিয়ছিলেন আরও কিছুদিন আগেকিন্তু কোথায় কী, মন্ত্রী এসে শুধু অঙ্কের ক্লাস নিয়ে গেলেনহিসেব বুঝিয়ে গেলেন, ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রের  কত টাকা দেওয়ার কথা, আর রাজ্য়ের ভাগে কত পড়েক্লাস শেষে দৃশ্য়তই হতাশ গ্রামবাসীরা বললেন, 'ধুস, সব রাজনীতি করতে এসেছে'

রাজনীতি কিনা বলা কঠিন, তবে আলোর অভাবে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে গ্রামে ঢুকেই বাবুল বুঝিয়ে দিলেন, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও বাংলার গ্রাম যে এমন অন্ধকারের মধ্য়ে পড়ে বঞ্চিত, তা মেনে নেওয়া যায় না সেভাবে কাউর নাম করলেন না ঠিকই, কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন, জঙ্গলমহল আজও কেমন অন্ধকারে পড়ে রয়েছে

গ্রামে ঢুকে সোজা চলে গেলেন হাতির আক্রমণে মৃত মথুর লোহারের বাড়িতে মৃতের ছবিতে মালা দিলেন তারপর পরিবার লোকজন বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মথুরবাবুর ছেলে সুভাষ বললেন, "বাবুলদা, এর আগেও কয়েকজন হাতির আক্রমণে মারা গিয়েছে দু-মাস আগে তো চোখের সামনে বাবা মারা গেলো অথচ, হাতির হানা রুখতে বন দফতর কোনও ব্য়বস্থাই নিল না ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় ক্ষতিপূরণের রাজনীতি" প্রথম পর্বে ক্ষোভটা অবশ্য় ছিল রাজ্য় প্রশাসনের বিরুদ্ধেই বেশিসুভাষের কথায়, "বিডিওকে বললাম মায়ের পেনশনের জন্য়উনি বললেন, আপনি একজন শিক্ষক  হয়ে কীভাবে মায়ের বিধবা ভাতার জন্য় বলছেন "  বন দফতরের রেঞ্জারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিলেন এই শিক্ষকবললেন, "রেঞ্জারকে বলেছিলাম, আমার বাড়ি ফিরতে রাত হয়আতঙ্কে থাকিরেঞ্জার রসিকতা করে বললেন, আপনি বাড়ি না-ফিরলেই তো ভালভেবে দেখুন কেমন চলছে রাজ্য়ের প্রশাসন"  মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে সুভাষ আরও বললেন,  "এখন গোটা গ্রাম আতঙ্কে তাই আমাদের ক্ষতিপূরণ চাইনা আমার ভাইয়ের একটা চাকরি  আর গ্রামে কাঁটাতারের বেড়া ও  ওয়াচ টাওয়ারের ব্য়বস্থা করে দিন"।

কিন্তু এরপরই হতাশ করলেন বাবুল।  কেন্দ্রীয় বন প্রতিমন্ত্রী বললেন, "ক্ষতিপূরণ হিসেবে  আপনাদের টাকা দেওয়া হয়। অন্যান্য রাজ্য দেয় ৫ লক্ষ টাকা সেটা এই রাজ্য সরকার এক লক্ষ টাকা কমিয়েছে তাই পশ্চিমবঙ্গে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। যেখানে কেন্দ্র তিনভাগ, রাজ্য এক ভাগ অর্থাৎ ২ লক্ষ ৬০ হাজার কেন্দ্র ও ১ লক্ষ ৪০ হাজার  রাজ্য দেয় দুজন মিলেই টাকাটা দেয়। রাজ্য় সরকার চাইলে ক্ষতিপূরণের টাকা বাড়াতে পারে"

এরপরই শুরু হয়ে গেল মৃদু গুঞ্জন ভিড়ের মধ্য়ে থেকে একে অন্য়ের উদ্দেশে বলতে থাকলেন, " আমাদের বিজেপি পার্টি থেকে জানানো হয়, কেন্দ্র থেকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী আসছেন।তাই গাড়ি ভাড়া করে ছুটে আসি।  কিন্তু এখানে এসে কোনও লাভ হল না খালি হাতেই ফিরতে হলো।"

হাওয়া বুঝতে সময় নিলেন না বাবুলভিড়ের মধ্য়ে থেকেই তাঁকে বলতে শোনা গেল, "এলাকায় হাতির হানায় বহু মানুষ মারা যান। এই গ্রামেও মারা গেছেন। তাই এসেছি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে। এখানে আমি এসেছি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে। রাজনীতি করতে আসিনি। যেটা আমি পারবো সেটা করবো আমাকে কয়েকদিন সময় দিন আপনাদের সমস্যা আমি লিপিবদ্ধ করেছি যার মধ্যে গ্রামে আট কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার অবশ্যই হবে।"

Share this article
click me!