৩৫ মিনিট ধরে বাথরুমে পড়ে ছাত্রী, গাফিলতি কি, প্রতিবাদে নামতে পারেন অভিভাবকরা

জিডি বিড়লায় ছাত্রীর আত্মহত্যায় নতুন করে বিতর্ক।  পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে  স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন অভিভাবকরা। অভিযোগ বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়েছিল আত্মঘাতী ছাত্রী। সিসিটিভি-তে পর্যবেক্ষণের কী কোনও লোক রাখা নেই, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। 

debojyoti AN | Published : Jun 21, 2019 4:18 PM IST

বারবার বিতর্কে জড়াচ্ছে জিডি বিড়লা। দেড় বছর আগের যৌন নির্যাতনের ঘটনার কালো দাগ এখনও লেগে রয়েছে স্কুলের গায়ে। তারই মধ্যে নয়া বিতর্কে এই স্কুল। রানী কুঠিরের এই স্কুলটি পঠন-পাঠনের আদব কায়দা এবং পড়ুয়াদের গ্রুমিং-এর জন্য বেশ কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তারসত্ত্বেও এই স্কুলের মধ্যে ঘটে চলে নানা অদ্ভুত সব ঘটনা। যাতে নবতম সংযোজন স্কুলের বাথরুমেই শুক্রবার দশম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রীর আত্মহত্যা। 

অভিযোগ, বাথরুমের মধ্যেই ৩৫ মিনিট ধরে পড়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে পরে দেখা গিয়েছে ছাত্রীটি যে সময় বাথরুমে ঢুকেছিল, তার অন্তত মিনিট ৩০ পরে তাকে বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সুতরাং, ধরে নেওয়া যেতে পারে সে বাথরুমে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে। একজন ছাত্রী বাথরুমে ঢুকল এবং সেখান থেকে ৩০ মিনিট পরেও বের হল না এটা কেন কারোর নজরে এল না? এই প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন অনেকে। দেড় বছর আগে জিডি বিড়লা স্কুলে নার্সারির এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। যাকে ভিত্তি করে রাজ্য থেকে দেশে তোলপাড় হয়েছিল। অভিভাবকদের নজিরবিহীনর প্রতিবাদে স্কুল কর্তৃপক্ষ শেষপর্যন্ত সিসিটিভি বসানো হয়। বাথরুমের যাতায়াতের পথেও সিসিটিভি রয়েছে। একজন ছাত্রী বাথরুমে ঢুকে আর বের হচ্ছে না, এটা সিসিটিভি-র নজরদারিতে বসা থাকা ব্যক্তির নজরে আসার কথা। তাহলে কি সিসিটিভি-র ফুটেজ পর্যবেক্ষণে কাউকে রাখা হয়নি? স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। 

অনেক অভিভাবকের মতেই, যদি সিসিটিভি-র পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যক্তি ছাত্রীটির বাথরুম থেকে না বের হওয়ার বিষয়টি ধরতে পারতেন তাহলে হয়তো আরও আগে তাকে উদ্ধার করা যেত। স্কুল চলাকালীন এক ছাত্রী বাথরুমে ঢুকে আত্মহত্যা করছে অথচ কারোরই নজরে তা আসছে না, এই বিষয়গুলিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকে অনেকে আঙুল তুলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা ৩৫ মিনিট ধরে ছাত্রীটি বাথরুমে পড়ে থাকল সেটাও কারোর নজরে এল না। 

প্রাথমিকত তদন্তে মনে করা হচ্ছে শ্বাসরোধ হওয়ার সময় নিশ্চয় ছাত্রীটির গোঙানির আওয়াজ হয়েছে। বাথরুমের কাছে-পিঠে কেউ থাকলে তার কানে এই আওয়াজ পৌঁছনোর কথা। মনে করা হচ্ছে দুপুরে যে সময় দশম শ্রেণির ছাত্রীটি বাথরুমে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল সে সময় আশপাশে কেউ ছিল না। থাকলে অন্তত গোঙানির আওয়াজটা কানে যেত বলেই মনে করা হচ্ছে। 

জিডি বিড়লা স্কুলের অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে তন্ময় ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন পড়াশোনা নিয়ে ছাত্রীটির উপরে স্কুল ও বাড়ির চাপ ছিল। যদিও, ছাত্রীটি মেধাবী হিসাবেই পরিচিত ছিল। গোটা ঘটনাকেই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাধিতেও পরিণত হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। ছাত্রীটি স্কুলের বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়েছিল বলে খবর চাউড় হয়েছে তা অভিভাবকদের পক্ষ  থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তন্ময়। এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি নজরে এল তাতে যথাযথভাবে প্রতিবাদ করতেও তাঁরা পিছ পা হবেন না বলে জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা একটি যৌথ কমিটি তৈরিরও দাবি জানিয়ে আসছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিয়ে এই যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই কমিটি আজও তৈরি করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তন্ময়। 

বছর দেড়েক আগেও শিশুর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জিডি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষের বহু গাফিলতি সামনে এসেছিল। যার জেরে অভিভাবকদের প্রতিবাদ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। স্কুলে বেশ কিছুদিন পঠন-পাঠনও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এবারও সেরকম কিছু হবে না তো, এই নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেছেন বেশকিছু অভিভাবক। 

Share this article
click me!